ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

হৃদরোগীর মাংস খাওয়ার পরিমাণ

ডা. মুহাম্মাদ সিদ্দিক

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৬ জুন ২০২৫

হৃদরোগীর মাংস খাওয়ার পরিমাণ

মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা।

মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানেই টেবিলজুড়ে গরু ও খাসিসহ বিভিন্ন পদের ছড়াছড়ি। তবে কোরবানিতে মুসলমানদের গরু’র প্রতি আগ্রহটা বেশি, রেড মিট যদিও পুষ্টিগুণে ভরপুর, তবুও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলাটা উচিত নয়। বিশেষ করে  হৃদ রোগীদের একটু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।  কারণ এতে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গরুর ও খাসির মাংস কতটুকু পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ। তা জেনে শুনে খাওয়া উচিত। 
একজন সুস্থ মানুষ কতটুকু গরুর মাংস খাবেন?
একজন পূর্ণবয়স্ক এবং সুস্থ মানুষ নিজ শরীরের প্রতি কেজির জন্য ০.৮ থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ কারোর ওজন যদি হয় ৬০ কেজি, তাহলে তিনি খেতে পারবেন ৪৮ থেকে ৬০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন। তবে গর্ভাবস্থা, মাসিক চলাকালীন অথবা মাসল বাড়াতে চাইলে এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
ব্যক্তিভেদে ও রোগ অনুযায়ী একজন মানুষ ২ থেকে ৩ টুকরো মাংস খেতে পারবেন রোজ। বিশেষ কোনও রোগ থাকলে চিকিৎসক এর  পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। যেমন কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে এক টুকরো হতে পারে মাংসের পরিমাণ। যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি তারা গরুর মাংস না খেলেই ভালো করবেন। আবার হৃদরোগী, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্যও গরুর মাংস এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
অতিরিক্ত মাংস খেলে কী হয়?
গরুর মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে অতিরিক্ত মাংস খেলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গরুর মাংসে থাকা কোলেস্টেরল শিরায় জমে রক্ত চলাচলা বাধা দেয়। এতে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এখন 
অতিরিক্ত গরুর, মাংস খেলে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা অ্যালার্জিজনিত জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
হৃদরোগীরা গরুর মাংস খাবেন যেভাবে
কোরবানির ঈদ মানেই বিভিন্ন রকমের পশু কুরবানি দেওয়া। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কুরবানি হয় গরু। যার কারণে সকলের ঘরেই কম বেশি গরুর মাংস রান্না হয়। হৃদরোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে অনেকেই চেষ্টা করেন না খাওয়ার বা কম খাওয়ার। তবে নিয়ম মেনে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও খেতে পারেন গরুর মাংস।  
গরু মাংসে অধিক চর্বি থাকে। তাই চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ শরীরে হঠাৎ চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
হার্ট ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা টিপস :
যেভাবে রান্না করবেন মাংস:
১. গরু মা খাসির মাংসগুলো যতটা সম্ভব ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। তাহলে তেলজাতীয় পদার্থ ঝরে যাবে। আর চর্বি সব ফেলে দিয়ে কাটুন।
২. মাংস সবসময় অল্প তেলে রান্না করুন। কারণ গরুর মাংসের নিজস্ব যে তেল আছে; তাতেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। সয়াবিনের বদলে সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
৩. বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে গরুর মাংস রান্না করুন। আলু, পেঁপে, পটোল ইত্যাদি দিয়ে গরুর মাংস রান্না করা যেতে পারে। এতে করে স্বাদে বৈচিত্র্যের পাশাপাশি পুষ্টিও যোগ হবে।
৪. হৃদরোগীদের জন্য মাংস রান্না করার সময় সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিয়ে কম তেলে রান্না করতে হবে। এতে স্বাদ কম হলেও এটি স্বাস্থ্যকর।
৫. মাংস রান্নায় ঘি অথবা ডালডা ব্যবহার না করাই শ্রেয়। বরং ফ্যাট কমাতে ভিনেগার, লেবুর রস অথবা টক দই দিয়ে মাংস রান্না করুন। এতে করে মাংস দ্রুত রান্নাও হবে।
৬. মাংস রান্নার পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে উপরে চর্বির আস্তরণ জমে যায়। পরে এগুলো চামচ দিয়ে ফেলে দিন।
৭. মাংস খাওয়ার সময় সঙ্গে সালাদ রাখুন। এছাড়া ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, মাশরুম বা পছন্দের সবজি দিয়ে মাংস রান্না করতে পারেন। এতে কম পরিমাণ মাংস খাওয়া হবে।
৮. গরুর মাংস ভুনা না করে তেল ছাড়া বেক, গ্রিল, স্টেক করে খেতে পারলে ভালো। সেখানে চর্বি প্রায় থাকে না বললেই চলে। রোগীদের  ঈদে সতর্কতা অবলম্বন করে চলাই ভালো। কোন অসতর্কতায় পরিবারে যেন ঈদের আনন্দ নিরানন্দ না হয়ে উঠে। 
সংক্রমণ এড়াতে :
যে কোনো মাংসই সঠিকভাবে রান্না না করলেই. কোলাই, সালমোনেলা বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া ভয়াবহ সেই  করোনা আবারও আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। তাই আমাদের মাঝে  আবারও সচেতনতা তৈরিতে সজাগ ও মাস্ক পরে চলতে হবে।


লেখক: এমবিবিএস, এমপিএইচ, মেডিসিন, কিডনি বিশেষজ্ঞ  ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, 
ওয়াশিংটন ডিসি. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

×