ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাপনের পরিবর্তন

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ

প্রকাশিত: ২১:১২, ১৬ জুন ২০২৫

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাপনের পরিবর্তন

বিশ্বজুড়ে নারীর স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় বেশি। জীবনযাপনে অনিয়ম ও অসচেতনতার কারণে তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই জীবন যাপনের সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনে চোখের ঝুঁকি কমে আসে। 
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা রক্তনালি ফেটে রক্তপাত হলে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বিঘিœত হলে এর কিছু কোষ পুষ্টির অভাবে মরে যায়। সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতিও বেশি হয়। তাই স্ট্রোকের লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সের নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি একই বয়সী পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। অথচ এই বয়সের অধিকাংশ নারী স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন নন।
স্ট্রোকের ঝুঁকি ও প্রতিকারের উপায় :
বেশিরভাগ নারী সংসার-সন্তান সামলানোসহ অন্যান্য গৃহস্থালির কাজে এত ব্যস্ত থাকেন যে, হাঁটার অবকাশ পান না। অনেকে নিরাপদে হাঁটার জায়গা পান না। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে হাঁটার জন্য দিনে অন্তত ৪০ মিনিট সময় বের করতে হবে।
৪৫ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা বলছে, সপ্তাহে স্বাভাবিক গতিতে দুই ঘণ্টা হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমতে পারে। আর দ্রুত হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।
৮০ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, বিষণœতা স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৯ শতাংশ বাড়তে পারে। বিষণœতায় ভোগা নারীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, শরীরচর্চার অভাব থাকে। ফলে ঝুঁকি বাড়ে। তাই ধূমপান ছাড়তে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জীবনযাপনে শৃঙ্খলা আনতে হবে। নিয়মিত কিছু শরীরচর্চা করতে হবে।
বেশি ঘুমালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে, আবার কম ঘুমালেও ঝুঁকি বাড়ে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় যাঁদের নাক ডাকে, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বেশি।
গবেষকদের ধারণা, যাঁদের মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি, তাঁদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই মাইগ্রেনে বেশি ভোগেন। মাইগ্রেনের তিনটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো মাথাব্যথার আগে দৃষ্টিসমস্যা (যেমন-ব্লাইন্ড স্পট বা ফ্লাশ লাইট দেখা), আলো সহ্য করতে না পারা ও বমিভাব। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে মাইগ্রেন-প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করতে হবে।
বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরানো ও বুকব্যথাÑ এগুলো হলো অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের (এএফ) লক্ষণ। এ সমস্যায় অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন হয়। এটা রক্ত জমাটবদ্ধতা, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিউর ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁদের এএফ রয়েছে, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি।
হাইপারটেনশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, রেগে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাঁদের রাগের প্রবণতা যত বেশি, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি তত বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা সহজে রেগে যান ও অপরের প্রতি আগ্রাসী হন, তাঁদের ঘাড়ের ধমনির পুরুত্ব সহনশীল মানুষের তুলনায় বেশি। ধমনির অধিক পুরুত্ব স্ট্রোকের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে বিবেচিত।
নারীদের মধ্যে লুপাসজাতীয় রোগের প্রবণতা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকি কমাতে নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবনাচারের প্রতি সচেতন হতে হবে।
লেখক : নিউরোসার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ  বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ) ল্যাবএইড, ধানমন্ডি, ঢাকা। হটলাইন: ০১৭১১৩৫৪১২০

 

×