
.
জীববৈচিত্র্যে অনন্য আড়িয়ল বিল সুরক্ষায় শুরু হওয়া জরিপ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল আড়িয়ল বিল। এর বেশিরভাগই বর্ষায় পানিতে টইটম্বুর থাকলেও শীতকালে পরিণত হয় বিস্তীর্ণ শস্য খেতে । ঋতুবৈচিত্র্যে হরেক রকমের পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে বিল। কিন্তু এই অঞ্চলের হৃদপিন্ড হিসেবে পরিচিত বিলকে নানাভাবে বিনষ্ট করে চলছে স্বার্থান্বেষী মহল। স্বার্থান্বেষী মহলের থাবা থেকে রক্ষার পরিকল্পনা চলছে। পরিকল্পনা সফল হলে বিলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে। রক্ষা পাবে বিলের ঐতিহ্য।
বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং আড়িয়ল বিলের জীবিকা এবং ভূমি ও জল সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হাইড্রোলজিক্যাল জরিপ, কৃষি আর্থ-সামাজিক জরিপ, পিআরএ ও খানা জরিপ এবং মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পরই শুরু হবে বিলের জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকার এই জরিপ গেল বছরের শেষ দিক থেকে শুরু করে। জরিপ করতে আসা পরিবেশবিদরাও বিলের নান্দনিকতা আর সমৃদ্ধ ফসল দেখে বিস্মিত।
পরিবেশবিদ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, আড়িয়াল বিল পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি জলাভূমি। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। আড়িয়ল বিলের বেশিরভাগ এলাকাই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র এবং বিলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সঞ্চিত থাকে। এখানে শীতকালে নানা ধরনের সবজির চাষ করা হয়। এ বিলের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে বর্ষাকালে পানি থৈথৈ পালতোলা নৌকা চলাচল আর শীতকালে মাঠে মাঠে সরষে ফুলের অবাক সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির মিষ্টি কুমড়া।
ধারণা করা হয়, অতি প্রাচীনকালে এ স্থানে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থল ছিল। পরবর্তীতে উভয় নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে এই স্থান শুষ্ক হয়ে বিলে পরিণত হয়। বিলটি ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং পদ্মা নদীর মাঝখানে একটি ছিটমহলসম জলাভূমি। বর্ষায় এর সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি নয়নাভিরাম। আড়িয়ল বিল ঢাকা থেকে প্রায় ৪২ কি.মি. দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত। হাজার বছর ধরে এটির প্রতিবেশ গড়ে উঠেছে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী এই বৃহৎ জলাশয় আড়িয়ল বিল মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের শ্রীনগর এবং সিরাজদিখান উপজেলায় অবস্থিত। এছাড়া ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ, দোহারের কিছু অংশও রয়েছে এই বিলে। আড়িয়ল বিল স্থানীয়ভাবে ‘আইড়ল বিল’ নামেও পরিচিত। ভূতত্ত্ববিদদের মতে বিস্তীর্ণ এই এলাকা এক সময় গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গমস্থল ছিল। ভূপ্রাকৃতিক বিবর্তনে উল্লিখিত নদীদ্বয় গতিপথ পরিবর্তন করলে এই এলাকা একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়। এর চারপাশে গড়ে ওঠে মনুষ্যবসতি। দৈর্ঘ্যে এটা প্রায় ২৬ কিলোমিটার, প্রস্থে ১২ কিলোমিটার। আয়তন ১৩৬ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এই বিল উত্তরে ধলেশ্বরী ও দক্ষিণে পদ্মা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্ষায় এই বিল পরিণত হয় এক বিশাল জলাশয়ে। তখন ছোট-বড় অসংখ্য নৌযান এই বিলের বুক চিরে চলাচল করে। অনেকে আসেন নৌভ্রমণে। শুকনা মৌসুমে এই বিলে পানি থাকে না। তখন এটা হয়ে ওঠে শস্যক্ষেত্র। লাউ, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, খিরাই, মরিচ, সরিষা ইত্যাদির চাষ হয়। আড়িয়ল বিলের বৃহদাকার ও সুস্বাদু মিষ্টি কুমড়ার সুখ্যাতি রয়েছে। কোনো কোনোটির ওজন ৫০-৬০ কেজিও হয়। শীতের সময় পুরো বিল পরিণত হয় সবুজ ও হলুদের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ। আর বর্ষাকালের সকালে এই বিলে ঊর্ধ্বাকাশের নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে অজ¯্র শাপলা ফুল। বিলের সেই শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এলাকার কয়েকশ’ দরিদ্র পরিবার। প্রাকৃতিক এই জলাধার বিখ্যাত দুটি কারণে। প্রথমত, এখানে প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপন্ন হয়। বিলের মাঝে জমি খনন করে তৈরি করা বড় বড় দীঘি, যেগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ‘ডেঙ্গা’ বলা হয়। তাতে উৎপন্ন হয় মিঠা পানির প্রচুর সুস্বাদু মাছ। আড়িয়ল বিলের কই মাছের খ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপন্ন হয়। এজন্য আড়িয়ল বিলকে বলা হয় লাখ লাখ মানুষের অন্নের জোগানদাত্রী। ফলে বিক্রমপুরবাসীর সঙ্গে এই বিলের গড়ে উঠেছে আত্মিক সম্পর্ক।
বিমানবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা বাতিল হলেও এবার নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি এই বিলের জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভূমি ব্যবসা শুরু করেছে। তাদের করাল গ্রাসে আড়িয়ল বিলের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আড়িয়ল বিলের দিকে তাকালে শাপলা ফুল ফুটে থাকার মতো শত শত সাইনবোর্ড চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এত কিছুর পরেও বর্ষাকালে আড়িয়ল বিলে গেলেই চোখে পড়বে এক পানির রাজ্য। জল ও জঙ্গলের দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই পর্যটকরা মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দেখতে পাবেন পানির মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শাপলা ফুলের কলি। আর আকাশে মেঘের ভেলায় উড়ে বেড়াচ্ছে পাখির দল। শ্রীনগর বাজারের চারপাশটা পানিতে ভরপুর আর শরতে নদীর দুধারে প্রচুর কাশফুল ফুটে থাকে। চারদিকে বিশাল জলরাশি। এতে ফুটে বাহারি শাপলা। ছোট ছোট নৌকায় শিশুসহ বয়স্কদের কেউ কেউ মাছ ধরেন আবার কেউ শাপলা তোলেন। জলরাশির মধ্যেই কয়েকটি বিশালাকার গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য দেখে মুহূর্তেই আপনি হারিয়ে যাবেন কল্পনার জগতে। আড়িয়ল বিল বিখ্যাত নামা দীঘির জন্য। যার স্থানীয় নাম ডেঙ্গা। পুরো আড়িয়াল বিলে কম করে হলেও ৫০০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এমন সব ডেঙ্গা বা দীঘি রয়েছে। মাধবী দীঘি এর মধ্যে অন্যতম। বর্ষা ছাড়াও আড়িয়ল বিলে শীতকালে থাকে সরষে ফুলের সমারোহ, বসন্তকালে বাতাসে কচি ধানের দোল ও গ্রীষ্মে সোনালি ধান কাটার দৃশ্য পর্যটকদের বিমোহিত করে।
বিল সুরক্ষায় জরিপ ॥ আড়িয়ল বিলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় শুরু হওয়া জরিপ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে । এ মাসেই রিপোর্ট প্রকাশ হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই জরিপ রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিল সুরক্ষায় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন শুরু হবে। বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদসহ সকল প্রাণিকুলবান্ধব উন্নয়ন হবে। স্বাভাবিক চাষাবাদের যেন কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ থাকবে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পরই শুরু হবে বিলের জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, বিলটির জলরাশি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেই ধান, শাপলা, কুমড়া এবং সবজিতে বিলের রূপ আরও বাড়িয়ে দেয়। এই জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হলে বিলও সুরক্ষা হবে আর বিলের গৃহস্থরাও হবে উপকৃত।
২৬ হাজার মেট্রিক টন চাল ॥ এবার বিলের ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ৪২ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। আড়িয়ল বিল থেকে জাতীয় খাদ্য ভা-ারে এবার প্রায় ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চাল যুক্ত হয়েছে। প্রতিবছর এই বিপুল খাদ্যের যোগান দেয় আড়িয়ল বিল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এই তথ্য দিয়ে বলেন, এবারও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের হার হেক্টরপ্রতি ৭ মেট্রিক টন। বিলের মাটি ও আবহাওয়ার কারণে এখানে ধানের উৎপাদন অন্যান্য অঞ্চল চাইতে বেশি। তবে বিলের মধ্যে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করা গেলে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিলটির খাল খনন না হওয়ায় বিলের কৃষি উপকরণ এবং উৎপাদিত ফসল বাজারজাত ছাড়াও সেচের পানি দিতেও সমস্যা হচ্ছে। কৃষিতে আধুনিকায়ন তথা প্রযুক্তি ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিলের সবখানে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই কৃষক বিশাল এই বিলের ধান কেটে আবার মাথায় করে নিয়ে আসতে হিমশিম খায়। তাই এখানে উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ধান কাটার সময় তাই শ্রমিক সংকটও দেখা দেয়। এসব ধানী জমিতে আবার বিভিন্ন হাউসিং কোম্পানির সাইনবোর্ডও টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি অভিযানে কিছু সাইনবোর্ড গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও তাদের তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
মিষ্টি কুমড়া জিআই পণ্য হচ্ছে ॥ মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলের বিশাল আকারের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি দেশজুড়ে। এমনকি সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। গুণে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় এর কদর বেশি। তাই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ঘোষণা হতে যাচ্ছে এ মিষ্টি কুমড়ার।
বর্ষায় পানিতে টইটম্বুর থাকলেও পানি নেমে যাওয়ার পর বিস্তীর্ণ শস্যখেতে পরিণত হয় বিলটি। এই শস্যের অন্যতম মিষ্টি কুমড়া। এবার একেকটি কুমড়ার ওজন হয়েছে ৯০ কেজি পর্যন্ত। বিলের বৈচিত্র্যময় জলজ উদ্ভিদ পচেই জমির উর্বরতা বাড়ায়। এখানকার কুমড়া স্বাদে ও আকৃতিতে অনন্য বৈশিষ্ট্যম-িত।
আড়িয়ল বিলে এবার ২২৫ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। বিলে এবার হেক্টরপ্রতি কুমড়ার গড় উৎপাদন প্রায় ৪০ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আড়িয়ল বিলের কুমড়াকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শীঘ্রই ঘোষণা আসবে।
বেহাল সড়কে বিপত্তি ॥ আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা ছাড়িয়ে বেহাল সড়ক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এক কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে আড়িয়ল বিলের হাজার হাজার টন ধান এবং মিষ্টি কুমড়াসহ বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত ফসল ও মাছ বাজারজাত বিঘ্নিত হচ্ছে। ইট বিছানো এই রাস্তার সবশেষ সংস্কার কবে হয়েছে তাও ভুলে গেছেন স্থানীয়রা। তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, প্রায় ৬ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের সংস্কার হচ্ছে না। নৌপথেও নাব্যের অভাব। তাই সড়কে চাপ বাড়ছেই। এতে সড়কটিতে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি আড়িয়াল বিলের কৃষকের ভোগান্তি বেশি। কৃষি উপকরণ জমিতে আনা-নেওয়াও কষ্টসাধ্য, আবার ব্যয় বেশি হচ্ছে। জমি বা খোলা থেকে ধান বিক্রির দরেও পড়ছে এর প্রভাব । কারণ বড় ট্রাক আনা যাচ্ছে। ছোট ট্রাক, পিক-আপ বা ট্রলি গাড়ি চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শুধু এই সড়কের দুরবস্থার কারণেই কম দরে ধানসহ অন্যান্য ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। কর্মকর্তারা জানান, বিলের বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য বাজারজাতের অন্যতম প্রধান পথ এই সড়ক দ্রুত সংস্কার করা হবে।
বিলে জীবন-জীবিকা ॥ আড়িয়ল বিলে শুষ্ক মৌসুমে ধান, মৌসুমি সব আগাম শাক-সবজি, বর্ষা মৌসুমে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ও জীববৈচিত্র্যময় আড়িয়ল বিল হলো লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিলে কৃষকের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর অংশে আড়িয়ল বিলে ৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এরই মধ্যে আড়িয়ল বিলের জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এখানকার খালগুলো এখন জোয়ারের পানিতে স্বরূপে ফিরতে শুরু করছে। এখনই জেলেরা বিলের বিভিন্ন খালে মাছ শিকার করছেন। আষাঢ়েই আড়িয়ল বিলে অথৈই পানির জলরাশি ও অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা শুরু হবে। আর পুরো বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আড়িয়ল বিলটি হয়ে উঠে বিনোদনের কেন্দ্রস্থল। অপরদিকে বর্ষায় বিল পাড়ের শত শত কর্মহীন মানুষ পর্যটকদের ময়ূরপঙ্খী নাও, নৌকা কিংবা ট্রলারে করে ঘুরিয়ে আয় করতে পারেন। এছাড়া বর্ষার কয়েকমাস আড়িয়ল বিলে শাপলা কুড়িয়ে ও মাছ শিকারের মাধ্যমে শত শত পরিবার জীবন নির্বাহ করে।
আড়িয়ল বিলে বর্ষার পানি নামার আগেই অসংখ্য ভিটায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন স্থানীয় কৃষকরা।
গেল ২৬ এপ্রিল দুপুরে আড়িয়ল বিল পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুর ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এদিন দুই উপদেষ্টা কৃষকের ধান কাটা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় এক আলোচনা সভায় আড়িয়ল বিলে কৃষি জমি ভরাট ও টপসয়েল কাটা বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। আড়িলয় বিল এলাকায় কয়েকটি খাল পুনঃখননের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন।
তবে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে হাউসিং ব্যসায়ীদের জমি ভরাট, স্থাপনা ও সাইনবোর্ড বাণিজ্য শুরু হয়েছে। মাটিখেকোদের কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রির কারণে বিখ্যাত আড়িয়ল বিলটি হুমকির মুখে পড়ছে।
বিলটিতে মাছ, সবজি, ধান ছাড়াও শাপলা, সামুক কুড়িয়ে বহু মানুষের জীবন চলে। বিল ঘিরে মানুষের নানা কর্মযজ্ঞ। আর পর্যটকদের পদচারণার কারণেও অনেকের আয় বেড়েছে। তাই নৌকাসহ পর্যটন উপযোগী নৌযানও তৈরি হচ্ছে। তবে এটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসও থাকা দরকার বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা।
প্যানেল