
ছবি:সংগৃহীত
জন্মসূত্রে কোনো সম্পদ পাননি, নেই পারিবারিক ব্যবসা বা হঠাৎ করে আসা লটারি—তবু মাত্র ১১ বছরে এক মধ্যবিত্ত যুবক গড়ে তুলেছেন ৫ কোটি টাকার সম্পদ। শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে, মাসিক বেতন ছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকা। সেখান থেকেই আজ তিনি আর্থিকভাবে স্বাধীন।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর সুশৃঙ্খল জীবনধারা, বিনিয়োগে ধৈর্য, আর দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা। চাকরির শুরু থেকেই তিনি নিজের আয় থেকে ২৫% সঞ্চয় করতেন। পরবর্তীতে শহরের ভাড়া ও খরচ এড়াতে ফিরে যান নিজের গ্রামে—যার ফলে সঞ্চয়ের হার পৌঁছে যায় ৭৫ শতাংশে।
এই সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল তিনটি সহজ নীতি—
🔹 ক্যারিয়ারে উন্নতি ঘটিয়ে আয় বাড়ানো
🔹 অপ্রয়োজনীয় খরচ না করা
🔹 নিয়মিত ও সচেতনভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা
তিনি কখনোই ঋণের পথে হাঁটেননি, বরং নিজের উপার্জনের সীমার মধ্যেই জীবন চালিয়ে গেছেন। চাকরি করার সময় এক সহকর্মীর কাছ থেকে শিখেছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে শেয়ার ধরে রাখলে কীভাবে তা সম্পদে রূপ নেয়। সেই উপলব্ধিই তাঁর বিনিয়োগ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
২০১৩–১৪ সালে তাঁর শেয়ারবাজার যাত্রা শুরু। তিনি কখনোই আলোচিত বা ঝুঁকিপূর্ণ স্টক কেনেননি। বরং ছোট অথচ ভিত্তিমূলকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকেই বেছে নেন। সেই সব শেয়ার থেকেই বছরে গড়ে ১৮–২০% রিটার্ন আসতে থাকে।
২০২০ সালের করোনাকালে যখন বাজার প্রায় ৪৫% ধসে পড়েছিল, তখনও অনেকের বিপরীতে তিনি আতঙ্কিত না হয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করেন। বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সম্পদের পরিমাণও লাফিয়ে বাড়ে।
বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের ৯০ শতাংশই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা, আর বাকি অংশ ইপিএফ, পেনশন ফান্ড ও নগদ অর্থে। এখন তিনি রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (REITs)-এর মতো আয়-নির্ভর সম্পদেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
যদিও আজ তাঁর মাসিক ব্যয় প্রায় ১ থেকে ১.২ লাখ টাকা, তবুও তিনি এখনো মিতব্যয়ী জীবনযাপন করেন। তাঁর বিশ্বাস, আর্থিক লক্ষ্য পূরণ হলেও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
এই মধ্যবিত্ত যুবকের গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয়—
- ছোট থেকে শুরু করলেও নিয়মিত সঞ্চয় ও বিনিয়োগে অনেক কিছু সম্ভব।
- বড় সুযোগ আসে ধৈর্য ও সময়ের মাধ্যমে, হঠাৎ লোভে নয়।
- নিজের আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি খরচ কমিয়ে সঞ্চয়ে মন দেওয়া আরও জরুরি।
এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আর্থিক স্বাধীনতা ভাগ্যের নয়, সঠিক পরিকল্পনা আর অধ্যবসায়ের ফসল।
মারিয়া