ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

এক সময় সুন্নি, আজ শিয়া- ইরানের ধর্মীয় রূপান্তরের ইতিহাস

প্রকাশিত: ২১:০১, ১৬ জুন ২০২৫

এক সময় সুন্নি, আজ শিয়া- ইরানের ধর্মীয় রূপান্তরের ইতিহাস

ছবি: সংগৃহীত

আজকের ইরান বিশ্বে একটি শিয়া মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অনেকেই জানেন না, একসময় এই ইরান ছিল সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল। ইতিহাসের এক পর্যায়ে পুরো একটি জাতি কীভাবে ধর্মীয়ভাবে এত বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেল, সেই প্রেক্ষাপট জানলে চমকে যেতে হয়।

 

 

ইসলামের ইতিহাসে শিয়া মতবাদের সূচনা হয় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর। তখন মুসলিম সমাজে প্রশ্ন ওঠে—নবীর উত্তরসূরি কে হবেন? একদল মুসলমান বিশ্বাস করতেন, নবীজির নিকটতম আত্মীয় এবং জামাতা ইমাম আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) নেতৃত্বের প্রকৃত যোগ্য। এই বিশ্বাস থেকেই গড়ে ওঠে "শিয়াতে আলী" অর্থাৎ "আলীর অনুসারী" দল, যা সংক্ষেপে শিয়া নামে পরিচিত।

শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত আলী এবং তাঁর ১১ জন বংশধর—মোট ১২ জন ইমামই ইসলামের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। এই মতবাদকেই বলা হয় দ্বাদশী শিয়া মতবাদ।

ইরানের ধর্মীয় চেহারায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ১৫০১ সালে। ওই বছর ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয় সাফাভি সাম্রাজ্য, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাহ ইসমাইল প্রথম। তিনি ছিলেন একজন তরুণ শাসক, যিনি নিজেকে শুধু রাজা নন, বরং আধ্যাত্মিক নেতা ও ইমাম আলীর বংশধর বলেও দাবি করতেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটি একতাবদ্ধ, শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র পরিচয়সম্পন্ন ইরান গড়ে তোলা।

 

 

সে সময় ইরানের পাশেই ছিল সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত অটোমান সাম্রাজ্য। তাদের থেকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে আলাদা অবস্থান নিতে শাহ ইসমাইল ঘোষণা দেন—ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হবে দ্বাদশী শিয়া ইসলাম।

তবে এই ধর্মীয় রূপান্তর মোটেই শান্তিপূর্ণ ছিল না। বিশেষ করে ইরানের জনবিরল ও বিরোধীপ্রবণ এলাকায় জোরপূর্বক শিয়া ধর্মে দীক্ষিত করা হয় স্থানীয় জনগণকে। একই সঙ্গে শাহ ইসমাইল শিয়া আলেম, কবি ও সুফিদের লেবানন, ইরাক এবং বাহরাইন থেকে আমন্ত্রণ জানান। তারা ধীরে ধীরে ইরানে ধর্মীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আচার-আচরণের মাধ্যমে শিয়া মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন।

শাহ ইসমাইলের সেই সিদ্ধান্তের প্রতিফল আজও স্পষ্ট। শত শত বছর পরও ইরানের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ শিয়া মুসলমান। যদিও তারা শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী, তবুও নিজেদের মুসলমান বলতেই গর্ব বোধ করেন এবং বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চান।

এই ইতিহাস শুধু ধর্মীয় নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবেও প্রভাব রেখেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে।
 

ছামিয়া

×