দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ মসজিদ , যেখানে নামাজ আদায় করতে পারে মাত্র সাত জন

চৌজা এক গম্বুজ মসজিদটির গঠন কাঠামো মোঘল স্থাপত্য কলার রীতি অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে। চার কোণে চারটি শক্ত বুরুজ বা ট্যারেটগুলো মসজিদের স্থায়ীত্বের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সমর্থ। ট্যারেটগুলো মসজিদের ছাদ ও গম্বুজ ছাড়িয়ে সোজা কয়েক ফুট উপরে উঠে গিয়ে শোভাবর্ধন করছে। ট্যারেট গুলোর সুদৃশ্য মিনার চূড়া মোঘল স্থাপত্যকলার রীতি অনুসৃত হয়েছে। আনুভৌমিক মোটিফ স্টাইলে মসজিদটিকে রাজকীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। স্থানীয় জনগ্রবাদ মতে মসজিদটি মোঘল সম্রাট বাবরের সময় নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদের কোনো লিপি প্রমাণ না থাকায় এ ব্যাপারে কোনো যথাযথ মন্তব্য করা যায় না। তাছাড়াও এর নির্মাণ তারিখও জানা যায় না।
 দেশের এই  ছোট  প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চৌজা গ্রামে অবস্থিত চৌজা মসজিদ। এক কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদে ইমামসহ সাতজন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে যাতায়াতের রাস্তা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সাবাইহাট বাজার থেকে দক্ষিণে আনুমানিক দুই কিলোমিটার মেটে রাস্তা পায়ে হেঁটে অথবা ভ্যান যোগে যাওয়া যায় । 

বর্তমান কালে চৌজা এক গম্বুজ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক একটি নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া আছে। 
মসজিদের পরিমাপ হলো- পূর্ব প্রাচীর দেওয়াল ১৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, পশ্চিম প্রাচীর দেওয়াল ১৪ ফুট ৮ ইঞ্চি, উত্তর প্রাচীর দেওয়াল ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং দক্ষিণ প্রাচীর দেওয়াল ১৪ ফুট ৮ ইঞ্চি। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত এর উচ্চতা ১১ ফুট ২ ইঞ্চি। 

ট্যারেট বা বুরুজগুলোর পরিমাণ নিম্নোক্তভাবে দেয়া হলো-
১. উত্তর-পূর্ব কোণের বুরুজের পরিমাপ: ৫ ফুট ৮ ইঞ্জি
২. দক্ষিন-পূর্ব কোণের বুরুজের পরিমাপ: ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি
৩. উত্তর-পশ্চিম কোণের বুরুজের পরিমাপ: ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
৪. দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের বুরুজের পরিমাপ: ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি
এছাড়াও প্রাচীর দেওয়ালে মধ্যস্থানে একটি মাত্র দরোজা পশ্চিম দেওয়ালে একটি মাত্র মেহরাব, উত্তর-দক্ষিণ দেওয়ালে একটি করে মোট দুইটি গবাক্ষপথ রয়েছে তাছাড়াও দরোজা, দুই গবাক্ষ এবং মেহেরাবের দুই পার্শ্ব দিয়ে আরো অপেক্ষাকৃত মোট আটটি বুরুজ বা ট্যারেট ছাদ পেরিয়ে আনুমানিক চার ফুট উপরে উঠে গেছে। চার কোণে চারটি শক্ত বুরুজ বা ট্যারেটগুলি ছাদ পেরিয়ে আনুমানিক ছয় ফুট উপরে উঠে গেছে। ট্যারেটগুলির গোড়ায় কলসাকৃতির অলঙ্করণ রয়েছে। দেওয়াল দুই ফুট পুরু দরজার উচ্চতা ৫ ফুট এবং প্রস্থ দুই ফুট তাছাড়াও তাজমহল আকৃতির মসজিদের একটি মাত্র গম্বুজ গোলাকার এবং সুদৃশ্য চূড়া রয়েছে এবং এই গম্বুজটি কোণাকুণি ভাবে নির্মিত ছয়টি ব্যাসের উপর স্থাপিত।

চৌজা এক গম্বুজ মসজিদের আশেপাশের ভিটা গুলোতে অজস্র খোলাম কুচি ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটি বিধ্বস্ত সভ্যতার ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়াও মসজিদের পূর্ব দিকের ভিটাগুলোতে পরিখা বেষ্টিত রাজকীয় স্থাপনার ধ্বংসপ্রাপ্ত নিদর্শন দেখা যায়।