
ছবি: সংগৃহীত
আমরা কেমন সমাজে বাস করছি— এই প্রশ্নটি অনেকের মনে আসে। সমাজ কি এগিয়ে যাচ্ছে, না কি পিছিয়ে পড়ছে? সমাজের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা বুঝতে হলে কিছু লক্ষণকে বুঝে নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছু স্পষ্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে একটি ব্যর্থ সমাজকে চিহ্নিত করা যায়। নিচে এমনই ১২টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো দেখে বোঝা যায় একটি সমাজ আদতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে।
১. হুজুগে জেগে ওঠা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে নয়: ব্যর্থ সমাজে মানুষ জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ হারায়। তারা যুক্তি ও বিজ্ঞানের চেয়ে গুজব, আবেগ ও হুজুগে বেশি সাড়া দেয়। বই পড়া, মুক্তচিন্তা বা বিজ্ঞানচর্চা সেখানে উপেক্ষিত থাকে।
২. সস্তা বিনোদনের মোহ: সৃষ্টিশীল কাজ নয়, বরং অর্থহীন বিনোদনের পেছনে ছুটে বেড়ায় মানুষ। এতে করে নিম্নমানের কনটেন্টও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, আর এই সুযোগে কিছু মানুষ রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।
৩. দুর্নীতিবাজরাই রোল মডেল: যারা অন্যায়ভাবে ধনী হয়েছে, তারাই সমাজে ‘সফল’ বলে বিবেচিত হয়। নীতি, সততা কিংবা আদর্শের মূল্য কমে যায়।
৪. অশিক্ষিতদের হাতে ভাগ্য: ব্যর্থ সমাজে শিক্ষার মূল্যায়ন কমে যায়। অশিক্ষিতরাই সেখানে নেতৃত্ব দেয়, আর অর্থ ও ক্ষমতাই হয়ে ওঠে সম্মানের মাপকাঠি।
৫. বোকার আধিপত্য: একজন চিন্তাশীল মানুষের বিপরীতে হাজারো মূর্খ মানুষ অবস্থান করে। যারা সচেতন কথা বলে, তারা চাপা পড়ে যায় পচা ও হীন মানসিকতার চিৎকারে।
৬. উদ্যোক্তা নয়, চাকরিজীবীই মুখ্য: নিজে কিছু করার চেয়ে অন্যের অধীনে কাজ করাকেই সাফল্য মনে করা হয়। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা, বরং অবমূল্যায়ন করা হয়।
৭. সত্য বলা মানেই অপছন্দের পাত্র হওয়া: যারা কঠিন সত্য উচ্চারণ করে, তাদের সমাজে ঠাঁই মেলে না। তারা উপহাসের পাত্র হয়, আর মিথ্যা ও তোষামোদই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
৮. লক্ষ্যহীন তরুণ সমাজ: তরুণদের সামনে কোনো মহৎ স্বপ্ন বা আদর্শ গড়ে তোলা হয় না। তারা দ্রুত ধনী হওয়ার শর্টকাট খোঁজে, পরিশ্রম বা প্রতিভার বিকাশে আগ্রহী হয় না।
৯. তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাতামাতি: মূল সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা না করে তুচ্ছ ও নিরর্থক বিষয়ে মেতে থাকে সবাই। গভীর বিশ্লেষণের অভাব থেকে যায়।
১০. তত্ত্বে বুঁদ হয়ে থাকা: অর্থহীন নানা তত্ত্ব ও মতবাদে মানুষকে ডুবিয়ে রাখা হয়। এর ফলে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জনসাধারণ।
১১. সবাই সবজান্তা: গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও সবার একটি করে মতামত থাকে। কেউ কিছু জানে না, তবু মত দেওয়ার হিড়িক লেগে থাকে।
১২. সমস্যার গভীরে না যাওয়া: সমস্যা সমাধানে মনোযোগ না দিয়ে, কে দোষী তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে সবাই। নিজের দায়িত্ব স্বীকার করার বদলে দোষ চাপানোতেই তারা বেশি পারদর্শী।
এই সব লক্ষণ দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না— এটি একটি ব্যর্থ সমাজ। এমন সমাজে এগিয়ে যাওয়া কঠিন, যদি না মানুষ সচেতন হয়ে পরিবর্তনের জন্য কাজ করে।
এম.কে.