
প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ভেষজ উদ্ভিদ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা সেই ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই ভুলে যাচ্ছি।
অথচ এক সময় মানুষের সর্দি-জ্বর হলে ওষুধের জন্য ফার্মেসিতে দৌড়ানো হতো না, খোঁজ করা হতো আশপাশের ভাঁট গাছের। ভাঁট পাতার রস খেয়ে আরাম পেতেন গ্রামের মানুষ। এখন এসব অনেকটাই বিস্মৃতির পথে।
ভাঁট গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum infortunatum) বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। এটি একটি বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যার প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দণ্ডায়মান এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
গাছটির পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা, আকারে কিছুটা পানপাতার মতো হলেও পৃষ্ঠদেশ খসখসে এবং রুক্ষ।
ডালের শীর্ষভাগে পুষ্পদণ্ডে শোভা পায় এর সাদা রঙের ফুল, যার মাঝে বেগুনি রঙের মিশেল থাকে। সাধারণত বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল অবধি এই গাছে ফুল ফোটে। ফুলে মৃদু সুগন্ধ থাকায় অনেক জায়গায় একে শোভা বৃক্ষ হিসেবেও রোপণ করা হয়।
ভাঁট গাছ শুধু তার সৌন্দর্যেই নয়, বরং তার অসাধারণ ঔষধিগুণের কারণেও দীর্ঘকাল ধরে লোকচিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে এর পাতা, ছাল ও মূল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভাঁট পাতার রস জ্বর ও ঠান্ডা উপশমে ব্যবহৃত হয় ।পাতাগুলো সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
শিশুদের পেটের কৃমি দূর করতে ভাঁট পাতার রস অত্যন্ত কার্যকর বলে গণ্য করা হয়।
পাতার রস ও মলম চর্মরোগ ও চুলকে আরাম দেয়।
ভাঁট পাতার পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহারে ভাঁট পাতার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের এই গাছের অংশ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তদুপরি, ভেষজ চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গাছ আজ বিলুপ্তির পথে। এটি শুধু একটি উদ্ভিদ নয়, বরং প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও সংস্কৃতির স্মারক।
আজ প্রয়োজন এই উদ্ভিদকে নতুনভাবে চেনা, সংরক্ষণ করা এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এর গুণাবলি ছড়িয়ে দেওয়া।
ভাঁট গাছকে শুধু ‘স্মৃতির উদ্যানের’ গাছ হিসেবে না রেখে আবারও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলাই হোক নতুন প্রজন্মের অঙ্গীকার।
রাজু