
ছবি: জনকণ্ঠ
বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পাবনা জেলার সন্তান আব্দুল লতিফ এর মেয়ে রোমানা বিথী আবেগঘন এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন যে, ২০০৮ সালে আমি এক বাসায় ল্যাপটপ দেখে খুব পছন্দ করেছিলাম। তখন হাতে গোনা কয়টা বাসায়ই বা এই দামি জিনিস পাওয়া যেতো। আব্বু পরদিন কিছু টাকা গুছিয়েই আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিল।স
২০১২ সালে যখন আমার ক্যাম্পাস অনেক দূরে ছিলো আমার বাসা থেকে তখন আমার আব্বু অনেক বড় একটা ডিসিশন নিয়েছিল। আমার জন্য আব্বু গাড়ি কিনে দিয়েছিলো। না আব্বুর তখন এতোটাও সামর্থ্য ছিলনা গাড়ি কেনার, কিন্তু মেয়েকে একা সিএনজিতে আব্বু দিবেনা। পাবলিক বাস তো দূরের কথা। আব্বুকে অনেক মানা করা সত্ত্বেও আব্বু বলেছিল যা হয়ত আমি পাইনাই তার শখ তোমাদের দিয়ে পূরণ করব। অনেক কষ্ট পিষ্ট করে আমাকে একটা গাড়ি উপহার দেয় আমার আব্বু। কতো কাপড় এখনো পড়ে আছে ড্রয়ারে সেলানো হয়নি। বিদেশ থেকে আনা কতো ব্যাগ, জুতা, কসমেটিকস কতো কষ্ট করে ক্যারি করতো, নিজের জন্য কিচ্ছু কিনতো না। অনেকে ভাববে আমি শো অফ করতেসি। যারা আমাকে চেনেন কাছে থেকে তারা খুব ভালো মতো জানেন যে আমি কতটা সাধারণ। আর প্রত্যেক বাবার স্যাক্রিফাইস লেভেল সমান হবেনা। আমাকে হয়তো বিলাসিতা দিয়েছে কিন্তু সেটাও স্যাক্রিফাইস এরই নতিজা।
অনেক বাবার গর্ব হয় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে। আমি অনেক ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করলেও আমাকে আমার বাবা চাকরির জন্য কখনো প্রেসার দেননি। আমার মনের ইচ্ছাকে সবসময় প্রায়োরিটি দিয়ে গেছেন। অনেক বাবা-মাকে শুনতে দেখেছি যে তোমার পিছনে এতো টাকা খরচ করলাম যদি ভালো রেজাল্ট না করো, ভালো চাকরি না করো তাহলে আর এসব করে লাভ কি হলো। কিন্তু আমার বাবা মায়ের চিন্তাটা এর ধারেকাছেও ছিলনা।
উপরে হাল্কা বিলাসিতার গল্প বলার পিছনে মেইন কারণ এটাই। আমার বাবা-মা কি চমৎকার মনের মানুষ। কোনো প্রতিযোগিতা নেই, কোনো ইগো নেই। সন্তান কীভাবে আরামে থাকবে, ভালো থাকবে সারাজীবন এইসব করতে গিয়ে সময় পার করে দিয়েছে। সন্তানকে ইনভেস্টমেন্টে ইনক্লুড না করা এটাও কতো বড় স্যাক্রিফাইস।
প্রত্যেকটা বাবার কাছেই তার মেয়ে প্রিন্সেস। আমার বাবা জানে তার মেয়ে কেমন। কেমন পরিবেশে সে গড়ে তুলেছে। বাবাকে অনেক কষ্টের কথা বলা হয়না। মনে হয় যে তার রাজকন্যা কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবে সে কষ্ট পাবে। সে তো ফুলের টোকাটাও লাগতে দেয়নি। আমার বাবা খুব সাধারণ অমায়িক মানুষ। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা তো যেনো শিখেই নাই। এতো অমায়িক আচরণের মানুষের মেয়ে হয়ে আমি গর্বিত। আর যেই প্রিন্সেস ট্রিটমেন্ট পেয়ে আমি বড় হয়েছি আল্লাহ্ যেনো ওই ট্রিটমেন্টটা আখিরাতেও বহাল রাখে। দুনিয়াতে বাবা ছাড়া কোনো মেয়েকে এই ট্রিটমেন্ট আর কেউ দিতে পারেনা।
আজ আমার বাবার গল্পের আসরের মেইন টপিক আমি। আমাকে আল্লাহ্ হেদায়েত দিয়ে ইসলামের পথের পথিক বানিয়েছেন। আমার মা এখনো ঐ পর্দায় আসতে পারেনি যেটা আমি মেইনইটেন করি। এটা আমার মা সবাইকে বলে বেড়ায়, নিজেও চেষ্টায় আছে। আমার বাবা বলে আমি নাকি তাদের নাজাতের উছিলা হবো। ওনারা দুনিয়ায় না থাকলে ওনাদের জন্য পরহেজগার মেয়ে রেখে যেতে পারছেন এটাই নাকি ওনাদের সফলতা। কি সুন্দর তাদের চিন্তা ভাবনা। কি সুন্দর তাদের সফলতার মাপকাঠি। দুনিয়াতে মানুষের আসল সফলতা বা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো হেদায়াত। যা আল্লাহ যাকে খুশি তাকে দেন। যাকে তাকে দেন না। আজ আমি আমার বাবা-মায়ের গর্ব। আমার বাবা-মা আমার গর্ব। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ্ প্রত্যেকটা মানুষকে এমন বাবা-মা পাওয়ার তৌফিক দিন।
আবির