ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

আমার দেখা সেরা যোদ্ধা

সঞ্জয় হরিজন (মাখন)

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ১৫ জুন ২০২৫

আমার দেখা সেরা যোদ্ধা

বিশ্ব বাবা দিবস ১৫ জুন। এই মাহেন্দ্রক্ষণকে ঘিরে সকল সন্তানদের অন্তরিক্ষে তাদের বাবার জন্য অপ্রকাশিত কতিপয় শব্দ প্রকাশ পায়। কেননা, কোনো কোনো সন্তানের চোখে তার বাবা একজন সবচেয়ে বড় ডাক্তার, কারোর চোখে শ্রেষ্ঠ আইনজীবী, কেউবা বলবে তার বাবা উৎকৃষ্ট ব্যক্তি। কিন্তু আমি এসব বলব না। আমি বলব আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘সেরা যোদ্ধা।’ আমার দেখা আমার সেরা যোদ্ধা আমার কল্যাণের তাগিদে দ্রুত বেগে ভূপৃষ্ঠে দৌড়াতে থাকেন। যদিও তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম দৌড়বিদ- উসেইন বোল্টকে পরাজিত করতে পারেননি। তবুও তিনি আমার চোখে দেখা সর্বোৎকৃষ্ট যোদ্ধা। আমার যোদ্ধার কাছে কোনো সুপার পাওয়ার নেই। তবুও তিনি আমার সকল ইচ্ছা, আশা-আকাক্সক্ষাকে পূরণ করার অভিপ্রায়ে সদা তৎপর থাকেন। গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যদিও আমার সেরা যোদ্ধাকে চিনে না। কিংবা আমার সেরা যোদ্ধার মতো আরো অনেক যোদ্ধা থাকতে পারে। তবে আমার যোদ্ধা আমার কাছে বেস্ট যোদ্ধা বলেই ভূষিত। 
মানুষের আবাসস্থল হিসেবে দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কখনো কখনো ভাবি- আমার বেঁচে থাকার সর্বোৎকৃষ্ট ঠিকানা হিসেবেই সৃষ্টিকর্তা তাকে সৃষ্টি করেননি তো? প্রতিউত্তরে আমার হৃদয়ে একটা ধ্বনিই আন্দোলিত হয়- আমার বেঁচে থাকার সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল হচ্ছে তার বক্ষপিঞ্জরের ক্ষুদ্র ইমারত। বাবা আমার সঙ্গে প্রায়ই মিথ্যা কথা বলেন, যদিও তিনি জানেন যে- ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ।’ তিনি আমার কাছে এই মিথ্যাটা বলেন যে, উনার কাছে ভুরি ভুরি টাকা-পয়সা রয়েছে। কেননা, উনি ঠিক-ই জানেন উনার বক্ষ পিঞ্জরের আবরণের খোলস ক্ষুদ্র হতে পারে। কিন্তু তার কাছে করা আমার আবদার কখনই ক্ষুদ্র হয় না। তার নিকট আমার প্রায় সকল আবদার যেনো চাওয়া মাত্রই ম্যাজিকের মতো পূর্ণতা পেয়ে যায়। মাঝে মাঝে আমার এটা মনে হয়- আমার প্রিয় এই বীর যোদ্ধা সৃষ্টির অন্যান্য সৃষ্টির মতো স্বাভাবিক সৃষ্টি-ই তো নাকি? তিনি আবার আলাদ্বীনের প্রদীপ থেকে বের হয়ে আসা অস্বাভাবিক জ্বিন নন তো? কেননা, আমার বেশিরভাগ অপূর্ণতাকে অপূর্ণ রাখেন না তিনি। এজন্যই তো আমার দেখা পৃথিবীর সব থেকে উত্তম ম্যাজিশিয়ান হলেন তিনি। আমার এই মিথ্যাচারী বন্ধুটির প্রতি সাত আসমান সম অভিযোগ। উনি নাকি কখনই ক্লান্ত হোন না? সারাদিন অফিস করে বাসায় এসে আমাকে আনন্দ প্রদানের জন্য কখনো কখনো হাতি সেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিঠে চড়িয়ে খেলা করাতেন, কখনো বা কপালের ভ্রু কুচকিয়ে নিজের চেহারাটিকে ব্যঙ্গ করে হাসানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। আমার সেই সব দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতো ঠিকই কখনোও বলতাম না, ‘থেমে যাও বাবা, পেটে খুব কষ্ট হচ্ছে যে, আর নাহ।’ কিন্তু কখনোই বুঝতাম না ঐ অভিনয়ের পিছনে বাস করা অপরাহ্ণের মলিন আবরণ। 
তার এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও ভালোবাসা অনুভব করি ঠিকই, কিন্তু কখনো বলে উঠতে পারি নি যে- বন্ধু, আপনাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। কারণ, তিনিও যে কখনই মুখ ফুটে বলেননি- ‘বাবা রে, তোকে আমি খুব ভালোবাসি।’ তবে আজকের দিনে এইটুকু শিখতে পারলাম- আমরা জাতি হিসেবে খুবই আঁটসাঁট একে অপরের প্রতি। কেননা, একে অপরকে ভালোবাসার পরেও কখনো প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি উভয়ের ভালোবাসার স্বর্গীয় অনুভূতির কথা। তবে আজকের দিনে পৌরুষের সেই পুরুত্ব দেওয়াল কে ভেঙে প্রকাশ করে দিতে চাই আপনি সহ সমগ্র বিশ্বজনের কাছে- ‘ভালোবাসি বাবা তোমায়, বড্ড বেশিই ভালোবাসি।’

প্যানেল

×