
দৈনিক জনকণ্ঠ
আমি বাবাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু কখনো তাকে এই কথা বলা হয়ে ওঠে না। মুখ ফুটে বলতে পারিনি কারণ হয়ত দীর্ঘদিনের অভিমান জমে আছে মনে। ঠিক কী কারণে অভিমান, সেটাও আর এখন স্পষ্ট করে বলতে পারি না।
হয়ত সেই কঠোর চোখ, শাসনের দেওয়াল, কিংবা তাঁর নীরব ভালোবাসার ভাষা বুঝতে না পারার অভিমান। অথবা সেই অপ্রকাশিত আবেগগুলো, যা কখনো স্পর্শ করেনি অনুভবের পরিপূর্ণতা।
আমার বাবাও নিশ্চই আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমরা একে অপরের সামনে নরম হয়নি কখনো। হয়ত এটাই আমাদের সম্পর্কের এক অদ্ভুত দূরত্ব, যেটা ভালোবাসাকে প্রকাশের চেয়ে গভীরে নিতে যাবে।
আজকাল "বাবা দিবস" এলে হঠাৎ চারদিকে বাবাকে নিতে উচ্ছ্বাস দেখি। সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল ভরে যান বাবার সঙ্গে তোলা ছবিতে, স্মৃতিচারণে, ভালোবাসার বাণীতে।
অথচ আমার মনে হয়, বাবাকে ভালোবাসার জন্য একটি দিন যথেষ্ট নয়। যিনি প্রতিদিনের জীবনে আমাকে গড়ে তুলেছেন নীরবে, নিভৃতে, তাঁকে ভালোবাসা জানানো কি কেবল একটি দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে?
আমি বাবাকে প্রতিদিন ভালোবাসি। সকাল থেকে রাত, প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তে, সাহসে, ধৈর্যে, তাঁর ছায়া খুঁজে পাই। কিন্তু এই অনুভবটা আমি তাঁকে জানাতে পারি না। অভিমানের ঘেরাটোপে আটকে থাকে ভালোবাসার কথা।
এই লেখাটি শুধু আমার বাবার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সেই সমস্ত সন্তানদের জন্যও, যারা বাবাকে ভালোবাসে কিন্তু বলা হয় না। যারা ‘বাবা’ শব্দটা মনে আসলেই একটা শূন্যতা অনুভব করে, কিংবা একটা চাপা কষ্ট। এই লেখাটি তাদের জন্য, যারা বাবা দিবসে ছবি না পোস্ট করেও, বাবাকে চুপচাপ মনে রাখে প্রতিদিন।
আমার চোখে, প্রতিটি দিনই বাবা দিবস।
হ্যাপী