
২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশ আমাদের নিত্য পথপরিক্রমা তা যেন বদলে যাওয়া অন্য রকম সময়ের আধুনিক কর্মযোগ। শিক্ষার্থী আন্দোলন থেকে কোটা সংস্কার বিপ্লবের নবঅভিযাত্রা সময়ের অনুষঙ্গ বলাই যায়। যে কোনো শাসনামল যখন দীর্ঘস্থায়ী বাতাবরণে আবর্তিত হয় সেখানে সুশৃঙ্খল গতি প্রকৃতি বারবার হোঁচট খায়। যা লাগাতর ঐতিহাসিক পরিক্রমার নিত্য কলহ বিবাদ। সেখানে গণতান্ত্রিক অব্যবস্থার চরম মাথাচাড়া দেওয়ার যে দুঃসহকাল পাড়ি দেওয়া তাও কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক কিংবা নিরন্তর যাত্রাপথের দিকনির্দেশনা হতে বারবার লক্ষ্যচ্যুত হওয়াও ইতিহাসের অমোঘ বিধান। ইতিহাসের যথার্থ নিয়ম যখন লঙ্ঘিত হয় তখন চিরায়ত বিধিবিধানই পথ রোধ করতে পিছপা হয় না। যুগ-যুগান্তরের যথার্থ শৃঙ্খলকে যারা লঙ্ঘিত করে ইতিহাসই তার যথার্থ বিচারে এগিয়ে আসা যেন সময়ের ন্যায্যতা। তাই ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান সারা দেশকে যেভাবে বিপ্লব বিক্ষোভে মাতিয়ে দেয় তা সত্যিই এক অনবদ্য রাষ্ট্রযন্ত্র পালা বদলের নিয়ামক এবং অপরাজেয় শক্তি। সশস্ত্র যুদ্ধের অবতারণা ব্যতিরেকে যে মাত্রায় রাষ্ট্র শক্তির নব অভ্যুদয় তাকে কোনোভাবে ঠেকাতে না পারাও ইতিহাসের আর এক নির্মম দলিল তো বটেই। নির্বাচনহীন ষোলো বছরের কঠিন দুঃশাসন যখন শুধু কণ্ঠবোধই নয় পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় অচেতন দুর্বিষহ অবস্থার কোপানলে সেই চরম মুহূর্তে দেশের আধুনিক কর্ণধার সময়ের প্রজন্ম রুখে দাঁড়ানোর যে নজির উপস্থাপন করে তাও যেন ইতিহাসেরই অদৃশ্য অঙ্গুলি নির্দেশ। যা থামানো কিংবা প্রতিরোধ করার অপশক্তি যেন ধরাশায়ী হয়ে প্রমাদ গুনতে শুরু করল। আর এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অধ্যায় যেন নতুন সময়ের জয়গান গাওয়া গত ১ বছরে যা আমরা সহজেই অনুধাবন প্রত্যক্ষ করে নতুন সময় উদ্যাপন করাও দীর্ঘমেয়াদি অপশাসন আর যন্ত্রণাদায়ক পরিবেশকে অনেকটাই পেছনে হারিয়ে দেওয়া। জুলাই অভ্যুত্থান এক বছর পার করার অনন্য সময়ে জনগণের কাছে নতুন প্রত্যাশার আর এক শুভক্ষণের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়াই শুধু নয়, যেন নতুন বর্ষপূর্তির নব জাগরণের আর এক শুভযাত্রার অনন্য অধ্যায়। যা কি না শুধু আধুনিক কিংবা নতুন প্রজন্মই নয় বরং দেশের সার্বিক জনগোষ্ঠীর মঙ্গল বারতার নব অভিযাত্রা। সত্যিই দেখতে দেখতে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ সাবলীল যাত্রাপথকে শুধু আলিঙ্গনই নয় বরং ফেলে আসা নানামাত্রিক জঞ্জালকেও সামলাতে অস্থিরতার দোলাচলে এগিয়ে যাওয়ার পথক্রমাকেও সামনের দিকে নিয়তই ধাবিত করছে। আধুনিক বাংলাদেশের সময়ের পথিকরা শুধু দায়িত্ব সম্পাদনই নয়, নতুন দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় চলমান থাকাও আর এক সফলকাম অভিযাত্রার নব অবগাহন। তার আগে যা প্রয়োজন ছিল তা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হওয়াও সময় পরিস্থিতির যথার্থ অনিবার্যতা। প্রথমত, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের ন্যায়নিষ্ঠ ভিত্তি প্রবর্তন করা। যেখানে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সার্বজনীন ভোটাধিকার অনুষ্ঠানের যথাযথ কার্যকর বিধি সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক আলাপ আলোচনা শুরু করাও সাধারণ মানুষকে আশান্বিত এবং সুষ্ঠু ও স্বাধিকার রাজনৈতিক যাত্রাকে মুক্ত পরিবেশের অধীন করা সময়কে নতুন মাত্রা দেওয়া। যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে সময় লাগছে না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সুষ্ঠু স্বাভাবিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেশকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে আইনি কাঠামোয় শক্ত করার আলামাত ও সকলের মাঝে স্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করছে। ধারণা করা হচ্ছে রমজানের আগেই নির্বাচন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির তারেক রহমানের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা সত্যিই জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে ভাবাটা অমূলক নয় কিন্তু ২০২৬ সালের রমজানের আগে বহুল আলোচিত, প্রত্যাশিত নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের কোনো বাধা বিঘ্ন যাতে সামনে না দাঁড়ায় সেটাও নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ঐকমত্য এক প্রকার শান্তি স্বস্তির বার্তা অনুমান করা কঠিন নয়। যে অস্থিরতায় দেশ ক্রান্তিকাল পার করেছিল এক যুগের বেশি সময় ধরে তার অবসানও ছিল নিতান্ত জরুরি। সমস্ত পাথর ছড়ানো কাটা বিছানো পথকে দুমড়ে মুচড়ে নতুন সময়ের আধুনিক প্রজন্ম যে মাত্রায় সড়কে নেমে আসে উদাত্ত বিপ্লব আর অভাবনীয় নতুন যাত্রার অগ্রদূত হয়ে তাকে বরমাল্য দেওয়াও ছিল জাতির জন্য আর এক শুভ কর্মপথে নির্ভয়ে ধর গানের মতো। শুধু কি সুর ঝঙ্কার? তার চেয়েও বেশি সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষের নতুন ঠিকানার সময়ের অভিগমন।
যা জাতিকে নতুন যাত্রার অনুগামী করে দেয়। যা শুধু কাক্সিক্ষতই নয়, বাঞ্ছনীয়ও বটে। তবে আমরা এখন শান্তি স্বস্তির যাত্রা পথ অতিক্রম করলেও হরেক বিপত্তি মাথাচাড়া দিতে সময় নিচ্ছে না। ইতোমধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুর মতো আর এক পানিবাহিত রোগ-বালাই। বহুল সংক্রমণ করোনাও তার গতি প্রকৃতি জানান দিতে কসুর করছে না। যার প্রতিষেধক আবিষ্কারও ছিল পরিস্থিতির ন্যায্যতা। সেখানে আবার অত্যধিক তাপপ্রবাহে জনজীবন কাহিল হওয়ার দুরবস্থা। আবার গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে কোমলমতি শিশু আর বয়োবৃদ্ধ মানুষেরা। যাদের সহ্য করার শক্তি অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। তার আগে কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করা ধর্মীয় বিধিবিধানের পবিত্রতম কর্তব্য। শুধু পশু কোরবানি দেওয়াই নয় বরং তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন হরেক বর্জ্য ও সামাজিক বলয়কে দূষিত এবং বেসামাল করতে পিছপা হয়ই না। সেখানে আবার তথ্য উপাত্তে দৃশ্যমান হচ্ছে কোমলমতি সিংহভাগ শিশুরা নাকি শ্রম ঝুঁকিতে নিজের মূল্যবান জীবনকে কোন্ রসাতলে নিয়ে যায় তাও এক বিপন্নতার আকাল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও শিশুবিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফের প্রতিবেদন সত্যিই এক দুঃসহ বাতাবরণ। বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত আছে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু। যা সংশ্লিষ্ট শিশুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিতই নয় বরং ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথকেও রুদ্ধতার জালে আটকে দিচ্ছে। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। চিরকালের প্রবাদ বাক্য। যা শুনে শুনে বড় হওয়া এবং সার্বিক প্রেক্ষাপটেরও যথার্থ নির্দেশক। শিশুশ্রম নির্মূলের ব্যবস্থাপনা নির্দেশ থাকলেও তা কার্যক্রমে আলোর মুখ না দেখা পরিবেশকে বেসামাল করতে যথেষ্ট ক্রিয়াশীল। বিভিন্ন প্রতিবেদনে রুষ্টতার চিহ্নও বেদনাদায়ক। বলা হচ্ছে এখনো লাখ লাখ শিশু শিক্ষা, খেলাধুলাসহ তাদের মূল অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা কোনোভাবেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ন্যায্যতার ভিত্তি তৈরিতে বরাবরই পিছু হটছে।
প্যানেল