ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ঘুমে ছটফট করে আপনার শিশু? পেছনে থাকতে পারে কৃমির ভয়ংকর আক্রমণ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৩০, ১৬ জুন ২০২৫

ঘুমে ছটফট করে আপনার শিশু? পেছনে থাকতে পারে কৃমির ভয়ংকর আক্রমণ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে শিশুদের অন্যতম স্বাস্থ্যঝুঁকির নাম—অন্ত্রের কৃমি সংক্রমণ। নীরবে শরীরের ভিতরে বাসা বাঁধে এসব পরজীবী, যারা শিশুর শরীর থেকে চুরি করে নেয় পুষ্টি, রক্ত, শক্তি ও সুস্থতা। পরিণামে শিশু হয়ে পড়ে দুর্বল, অস্থির ও রোগপ্রবণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬ মাস থেকে ১২ বছরের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। খেলাধুলার সময় মাটি বা মলদ্বারের মাধ্যমে এসব কৃমি দেহে প্রবেশ করে। নিয়মিত চিকিৎসা ও সচেতনতা না থাকলে এটি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।


কৃমির ভয়াবহতা:

1. শিশুর শরীর থেকে আয়রন, ভিটামিন ও পুষ্টি শুষে নেয়

2. শিশু অনিদ্রায় ভোগে, মনোযোগ হারায়

3. মারাত্মক সংক্রমণে অন্ত্র অবরুদ্ধ হতে পারে

4. দীর্ঘমেয়াদে অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতা তৈরি হয়

5. মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে

 

লক্ষণ যেগুলো কৃমির ইঙ্গিত দেয়:

1. রাতে ঘুমের মধ্যে ছটফট বা অস্থিরতা

2. পায়খানার রাস্তায় বারবার হাত দেওয়া বা চুলকানো

3. পায়খানায় বা ডায়াপারে সাদা ছোট কৃমি দেখা যাওয়া

4. পেটে ব্যথা, গ্যাস বা ফাঁপা অনুভব করা

5. খাবারে অনীহা, ওজন না বাড়া বা হঠাৎ কমে যাওয়া

6. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা বমিভাব

7. চটচটে স্বভাব, ক্লান্তি ও দুর্বলতা

8. মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে যোনিপথে জ্বালা বা চুলকানি

9. মলদ্বারে র‍্যাশ বা লালচে ভাব


প্রতিরোধে যা করবেন:

1. শিশুদের নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন

2. অন্তর্বাস ও পোশাক প্রতিদিন ধুয়ে দিন

3. নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখুন

4. পরিষ্কার পানি ও রান্না করা খাবার খাওয়ান

5. বিছানা, বালিশ, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকান

6. বাইরে খেললে জুতা পরানো নিশ্চিত করুন

7. টয়লেট ব্যবহারের পর সাবধানে পরিষ্কার করান

 

চিকিৎসা ও করণীয়:

  •  সাধারণত ৬ মাসের পর থেকেই শিশুকে প্রতি ৬ মাস পরপর কৃমিনাশক ওষুধ (যেমন Albendazole বা Mebendazole) খাওয়ানো উচিত
  • ওষুধ খাওয়ানোর ৭–১৪ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া জরুরি
  •  পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একইসাথে চিকিৎসা দেওয়া উচিত
  • গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন


অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ:

কৃমি কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। শিশুর আচরণ, স্বাস্থ্য ও পড়াশোনায় প্রভাব ফেলতে পারে এটি। নিয়মিত হাইজিন, ওষুধ এবং সচেতন অভ্যাসই পারে এই নীরব শত্রুর হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করতে।

"কৃমি থেকে মুক্তি, শিশু থাকুক সুস্থ ও হাসিমুখে" — হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
আপনার সন্তান যদি রাতে ঘুম না পায়, পায়খানার সময় অস্বস্তি বা পেটে ব্যথা অনুভব করে—তবে আর দেরি নয়। সচেতন হোন, সময় মতো ব্যবস্থা নিন।

Mily

×