ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ওজন কমানোর ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয়! সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:০৩, ১৬ জুন ২০২৫

ওজন কমানোর ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয়! সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানোর ‘জাদুকরী’ ওষুধ হিসেবে ওজেম্পিক (Ozempic) ও উইগোভি (Wegovy) বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এসব ওষুধের কারণে শুধু শরীর নয়, মুখগহ্বর ও দাঁতের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মুখ শুকিয়ে যাওয়া, তীব্র দুর্গন্ধ, এমনকি দাঁতের স্থায়ী ক্ষয়ের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে বহু রোগীর মধ্যে। চিকিৎসকদের মতে, এই সমস্যা অবহেলা করলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের মৌখিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।

মুখে ‘শুকনো মরুভূমি’: লালা কমে যাচ্ছে বিপজ্জনক হারে

ওজেম্পিক ও উইগোভিতে থাকা সেমাগ্লুটাইড নামক উপাদান মুখে লালার নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। চিকিৎসা পরিভাষায় এ অবস্থাকে বলা হয় ‘জিরোস্টোমিয়া’। গবেষণা বলছে, এই ওষুধ লালাকে আঠালো ও ঘন করে তোলে, ফলে মুখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে না। অনেকেই জানান, ওষুধ গ্রহণের পর তারা পানি পানের ইচ্ছাও হারিয়ে ফেলেন—যা মুখকে আরও বেশি শুষ্ক করে তোলে।

দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস ও দাঁতের সমস্যা

মুখে লালার পরিমাণ কমে গেলে ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জিহ্বায় সাদা আস্তরণ তৈরি করে এবং ‘মর্নিং ব্রেথ’-এর মতো তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। একইসঙ্গে দাঁতের চারপাশেও ক্ষয় হতে শুরু করে।

বমিভাব, দাঁতের এনামেল ক্ষয়

এই ওষুধের আরেকটি পরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বমি ও বমিভাব। সেমাগ্লুটাইড পাকস্থলীর খাদ্য খালি হওয়ার গতি ধীর করে দেয়, ফলে হজমে সমস্যা হয়। যারা বারবার বমি করেন, তাদের দাঁতের উপর এসিডের প্রভাব পড়ে এবং এনামেল ক্ষয়ে যায়। এই ক্ষয় প্রথমে চোখে না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে দাঁত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

কীভাবে রক্ষা করবেন মুখের স্বাস্থ্য?

চিকিৎসকরা বলছেন, দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান, সুগার-ফ্রি চুইংগাম চিবানো, মুখে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার (যেমন: দই বা কেফির) খাওয়া লালা উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ, অম্লীয় খাবার এড়িয়ে চলা, মুখ পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে অ্যালকোহল-মুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

নারীদের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা এই ওষুধ ব্যবহারে দ্বিগুণ বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন। বিশেষ করে হজমজনিত সমস্যা ও বমির প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই নারীদের ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ ভাগ করে খাওয়া এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা জরুরি।

ওষুধ বন্ধ করলেই কি সমস্যার সমাধান?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ বন্ধ করলে মুখের শুষ্কভাব বা হজম সমস্যা কিছুটা কমে এলেও, দাঁতের যে ক্ষয় হয়ে গেছে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। ফলে, ওষুধ ব্যবহারের সময় থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।

চিকিৎসকদের সতর্কতা

চিকিৎসকদের পরামর্শ, ওজন কমাতে ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা উচিত। নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ ও মৌখিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে এসব ওষুধ হতে পারে স্থায়ী ক্ষতির কারণ।

 

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।

 

রাকিব

×