ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে হামের প্রকোপ: ঝুঁকিতে শিশুরা, টিকার সময়সূচি নিয়ে নতুন ভাবনা

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:৩৫, ১৬ জুন ২০২৫

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে হামের প্রকোপ: ঝুঁকিতে শিশুরা, টিকার সময়সূচি নিয়ে নতুন ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী হামের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে হাম আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে হামের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ভিয়েতনামে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে হাজার হাজার শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই হাম আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭ জনে, যেখানে ২০২৪ সালে সারা বছরজুড়ে আক্রান্ত হয়েছিল ৫৭ জন। অস্ট্রেলিয়ায় হামের বেশিরভাগ ঘটনাই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ-সম্পর্কিতবিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি কিংবা আক্রান্ত ভ্রমণকারীর সংস্পর্শে আসা লোকজনের মধ্যেই এ রোগ ছড়াচ্ছে।

হাম মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটি টিকা নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ায় ১২ ও ১৮ মাস বয়সে শিশুদের দুটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়। তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে, এখন প্রশ্ন উঠছেএই টিকাদান কর্মসূচির সময়সূচি কি নতুন করে ভাবতে হবে?

হাম সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য

হাম হলো একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা মর্বিলিভাইরাস গণের অন্তর্গত। এ রোগে জ্বর, কাশি, সর্দি ও শরীরে লালচে দাগ বা র‍্যাশ হয়। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি সামান্য অসুস্থতা হিসেবেই দেখা দেয়, তবু কখনো কখনো এটি জটিলতায় রূপ নেয়ফলাফল হতে পারে হাসপাতালে ভর্তি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত।

এই ভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ায় এটি অত্যন্ত সংক্রামক। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি ১২ থেকে ১৮ জন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারেন, যদি তারা হামের টিকা না নিয়ে থাকেন। সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯৫ শতাংশের বেশি দুই ডোজ টিকার কাভারেজ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে বিশ্বজুড়ে টিকাদান হ্রাস পাচ্ছে, যা হামের এই বিশ্বব্যাপী পুনরুত্থানের অন্যতম কারণ।

শিশুদের কখন টিকা দেওয়া হয়?

নবজাতকরা সাধারণত মায়ের শরীর থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবডির মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য হামের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা কমে যায়। ডব্লিউএইচও পরামর্শ দেয়সব শিশু যেন দুই ডোজ হাম টিকা পায়। যেসব দেশে হাম বেশি ছড়াচ্ছে, সেখানে শিশুদের ৯ মাস বয়সে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে৮.৫ মাসের কম বয়সে টিকা দিলে সেই টিকার অ্যান্টিবডি তুলনামূলক দ্রুত কমে যায়, সম্ভবত মায়ের অ্যান্টিবডির হস্তক্ষেপের কারণে। তাই উন্নত দেশগুলোতে, যেখানে হাম নিয়ন্ত্রণে, সেখানে প্রথম ডোজ ১২ মাস বয়সে দেওয়া হয়যা তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা প্রদান করে।

অস্ট্রেলিয়ায় ১২ মাসে এমএমআর (হাম-মাম্পস-রুবেলা) টিকা এবং ১৮ মাসে এমএমআরভি (হাম-মাম্পস-রুবেলা-চিকেনপক্স) টিকা দেওয়া হয়। যদি শিশু কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দেশে ভ্রমণ করে কিংবা কোনো প্রাদুর্ভাবের মধ্যে থাকে, তাহলে ছয় মাস বয়সেই অতিরিক্ত একটি ডোজ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নবজাতকদের অ্যান্টিবডি নিয়ে নতুন গবেষণা

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের প্রায় ৮ হাজার শিশুর মধ্যে, জন্মের সময় ৮১ শতাংশ শিশুর শরীরে মায়ের অ্যান্টিবডি থাকলেও, চার মাস বয়সে তা নেমে আসে মাত্র ৩০ শতাংশে। গবেষকেরা বলছেনমাতৃঅ্যান্টিবডি সম্ভবত আগের ধারণার চেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছেশিশুর প্রথম হাম টিকা কি আরও আগেই দেওয়া উচিত?

তাহলে টিকার সময়সূচি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি?

উক্ত গবেষণার তথ্য স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের শিশুদের নিয়েই, যা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে সরাসরি প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবুও, বিশেষ ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের জন্য টিকার বয়সসীমা কিছুটা কমানোর যৌক্তিকতা তৈরি হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে, উদাহরণস্বরূপ, চার মাস বয়সী শিশুকেও হাম টিকা দেওয়া হয় যদি সে হামপ্রবণ দেশে ভ্রমণ করে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা আপাতত কম। নতুন ডোজ যুক্ত করা খরচসাপেক্ষ এবং কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছেবিশেষ করে এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে টিকার কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দুই ডোজ টিকা নিশ্চিত করাই হামের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র। ১৯৬৬ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ হাম টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এর আগের প্রজন্মের অধিকাংশই প্রাকৃতিকভাবে হাম আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে।

 

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।

রাকিব

×