
ছবি: সংগৃহীত
শিশুদের টাইপ‑১ ডায়াবেটিস হলো একটি অটোইমিউন (নিজস্ব রক্ষা ব্যবস্থা নিজেই ভুলভাবে আক্রমণ করে) রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষ ল্যাংহার্স আইলেট সেলগুলোকে আক্রমণ করে। এর ফলে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় – ইনসুলিন হলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এমন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ।
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা (খবরে প্রকাশিত)
বাংলাদেশে আনুমানিক ১.১ লক্ষ শিশু টাইপ‑১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সারা বছর ১৭,০০০–১৭,০৫৭ জন নতুন কেস শনাক্ত হচ্ছে । ২০০,০০০ জন ‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১৬ বছরের নিচের’ শিশু রয়েছে, যার মধ্যে টাইপ‑১ রোগীর সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার । টাইপ‑২ ডায়াবেটিসেরও উদ্বেগজনক বৃদ্ধি রয়েছে, যা সুস্থ জীবনে ঝুঁকি বাড়ায় ।
যদি আপনার শিশুকে টাইপ‑১ ডায়াবেটিস (T1D) হয় – করণীয়:
১. ডায়াগনোসিস ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা
পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করুন: সাধারণ লক্ষণ হলো অতিরিক্ত প্রস্রাব, বেশি পিপাসা, ওজন কমে যাওয়া, ক্লান্তি ।শিশুকে সঙ্গে সঙ্গে একটি পেডিয়ার্টিক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা বিশেষায়িত ইউনিটে নিয়ে যান।
২. ইনসুলিন থেরাপি
বেশিরভাগ সময় Multiple Daily Injections (MDI) বা Continuous Subcutaneous Insulin Infusion (পাম্প) প্রয়োগ করা হয় । HbA1c নিরীক্ষণ প্রতি ৩ মাস অন্তর করা উচিত ।
৩. রক্তে গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ
Finger-stick পদ্ধতি ব্যবহার করে দিনে অনেকবার রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে হবে । সম্ভব হলে Continuous Glucose Monitor (CGM) ব্যবহার করুন – এতে রক্তের গ্লুকোজ নিরীক্ষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় ।
৪. ইনসুলিন ও কার্বোহাইড্রেট গণনা
খাবারের শর্করা গুনে সেসব অনুযায়ী ইনসুলিনের ডোজ নির্ধারণ করা হয় ।
৫. হাইপো ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া হ্যান্ডলিং
রক্তে শর্করা কমে গেলে (hypoglycemia), ১৫‑২০ গ্রাম দ্রুত শর্করা (ফলরস/জুডি কম্বুলি) দিয়ে রক্ত ঠিক করা, ১৫ মিনিটে পুনঃপরীক্ষা, প্রয়োজনে পুনরায় সাপ্লাই । হারানো সচেতনতা হলে জরুরি Glucagon টিকে প্রয়োগের পরামর্শ ।
৬. শিক্ষা ও পারিবারিক সহায়তা
CDC অনুসারে, পরিবার ও শিশুকে যথোপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । স্কুলে ও ঘরে একজন নির্দিষ্ট যত্নদাতা থাকা উচিত, যাতে দৈনিক রক্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কার্ব গণনা কাজ সহজ হয় ।
৭. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য, সঠিক পরিবেশ টাইপ‑১ রোগীদের জীবনে সহায়ক ।
৮. মানসিক ও সামাজিক সমর্থন
শিশুদের মাঝে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে – প্রয়োজনে কনসেলিং বা থেরাপির ব্যবস্থা দরকার ।
৯. দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ
থাইরয়েড, কিডনি, চোখ, স্নায়ু ও উচ্চ রক্তচাপের নিয়মিত পরীক্ষা চলবে ।
বাংলাদেশে সহায়তা ও সুযোগ
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (BADAS) – BIRDEM হাসপাতালসহ ৮০টি কেন্দ্র উদ্বেগজনকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে । বিভিন্ন দাতা সংস্থা শিশুরা যাতে ইনসুলিন ও সেবা পেতে পারে সে জন্য ‘Changing Diabetes in Children (CDiC)’ প্রোগ্রাম চালু করেছে । সরকারি ও বেসরকারি সেবায় শিশুদের জন্য ইনসুলিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি হওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
Mily