
ছবিঃ সংগৃহীত
দীর্ঘ দেড় বছর পর দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়ায় মানুষের মাঝে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হলেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, বরং প্রয়োজন সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রবীণ ব্যক্তি, ১৩ জুন ঢাকায় একজন এবং চট্টগ্রামে একজন করোনায় মারা যান। এই ঘটনায় নতুন করে সক্রিয় হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫০ শয্যার ডেডিকেটেড কোভিড ইউনিট এবং জারি করা হয়েছে ১১ দফা নির্দেশনা।
আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী ওমিক্রনের দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট—এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। নমুনাগুলোর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্টই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও ভয়াবহতা কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি জানান, নতুন করে যারা জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গে ভুগছেন, শুধু তাদেরই করোনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি করোনার টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে, বিশেষ করে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা এখনো টিকা নেননি, তাদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মুশতাক আহমেদ জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডেও করোনার নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে, তবে সেগুলোও আগের মতো প্রাণঘাতী নয়। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন যেন সংক্রমণ না বাড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. হালিমুর রশীদ জানিয়েছেন, বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে পুনরায় করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং যেখানে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা মিলবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে কিট আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সীমান্ত, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে এবং ভারতের মতো সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া দেশগুলোতে ভ্রমণের ব্যাপারে জনগণকে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে হঠাৎ করেই করোনা সংক্রান্ত কল বেড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে এবং পরামর্শ নিতে আগ্রহও দেখা যাচ্ছে।
ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান জানান, বর্তমানে দেশের হাতে ৩২ লাখ ফাইজারের টিকা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে জেলার জেলায় পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ১৪ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জন, মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ৫০২ জন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩ জন মারা গেছেন।
সূত্রঃ বাসস
নোভা