
বেশিরভাগ অভিভাবকই ভাবেন, শিশু মাঝে মাঝে পেট ব্যথা বা পাতলা পায়খানা করলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যা কৃমির কারণে হয়ে থাকে—যা ধীরে ধীরে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
আমি, ডা. শাহিনুল ইসলাম, প্রতিদিন অসংখ্য শিশুর অভিভাবকের মুখে শুনি—"ডাক্তার সাহেব, বাচ্চা তো খাচ্ছে ভালো, কিন্তু ওজন বাড়ছে না কেন?"
আমার প্রথম প্রশ্ন থাকে—আপনি শেষ কবে কৃমির ওষুধ খাইয়েছেন?
এই একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তরেই প্রায়শ সমস্যার মূল কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
কেন কৃমির ওষুধ খাওয়ানো জরুরি?
কৃমি শিশুর দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে নেয়, যার ফলে তারা দুর্বল, অমনোযোগী ও রোগপ্রবণ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদে এতে শিশুর বৃদ্ধির হার থেমে যেতে পারে।
শিশুর জন্য কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম:
-
বয়স: ১ বছর বয়স পূর্ণ হলেই শিশুকে প্রথমবার কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
-
সময়: প্রতি ৬ মাস পর পর, অর্থাৎ বছরে দুবার খাওয়ানো উচিত—একবার গ্রীষ্মে, আরেকবার শীতে।
-
ঔষধের নাম: অ্যালবেনডাজল / মেবেনডাজল (ডোজ শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী)।
-
খাওয়ানোর সময়: খাওয়ার পরে বা রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়ানো ভালো। খালি পেটে নয়।
-
পরিপূর্ণ কোর্স: কোনো কোনো ক্ষেত্রে টানা ৩ দিন বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ ডোজ দিতে হয়।
লক্ষণ যেগুলোতে সতর্ক হবেন:
-
রাতের বেলায় পায়ুপথে চুলকানি
-
ওজন না বাড়া, অরুচি
-
পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা
-
দাঁত ঘষা, অতিরিক্ত ঘুম
-
বাচ্চা দুর্বল ও মনোযোগহীন হয়ে পড়া
সচেতনতা থাকলেই প্রতিরোধ সম্ভব:
-
শিশুকে নিয়মিত হাত ধোয়া শেখান।
-
রাস্তার খাবার ও অপরিচ্ছন্ন জল এড়িয়ে চলুন।
-
নখ ছোট করে কাটা রাখুন।
-
পরিবারে সব সদস্যকে একই সময়ে কৃমির ওষুধ দিন।
ডা. শাহিনুল ইসলাম বলছেন:
"শিশুর পুষ্টি নিয়ে যত ভাবেন, কৃমি তাড়ানো তার প্রথম ধাপ। প্রতিটি মা-বাবার দায়িত্ব—বাচ্চাকে সময়মতো কৃমির ওষুধ খাওয়ানো। নইলে আপনি অজান্তেই তার স্বাস্থ্যকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছেন।"
Jahan