
ছবি: সংগৃহীত
এই বছরের বিশ্ব তামাক দিবসের থিম ছিল— “প্রলোভনের মুখোশ খুলে দাও: তামাক ও নিকোটিন পণ্যের প্রচারে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কৌশল উন্মোচন”, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে তামাক ও নিকোটিন কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে এসব আসক্তিকর পণ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে এবং তার ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি লুকিয়ে রাখে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই অপকৌশলগুলো ফাঁস করে নীতিগত পরিবর্তনের আহ্বান জানানো।
নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ওষুধ এবং কাউন্সেলিং যেমন জরুরি, তেমনি শারীরিক ব্যায়ামও ধূমপান ছাড়ার জন্য এক শক্তিশালী কিন্তু উপেক্ষিত উপায়। ব্যায়াম মানসিকভাবে সচেতন রাখে, তীব্র চাহিদা কমায়, মানসিক চাপ হ্রাস করে, এবং মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
প্রথমেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের শারীরিক সক্ষমতা বুঝে নিন, তারপর শুরু করুন ধূমপান ছাড়ার যাত্রা।
নিচে দেওয়া হলো ধূমপান ছাড়তে সহায়ক ৫টি সহজ ও কার্যকর ব্যায়ামের তালিকা:
১. হাঁটা ও অ্যারোবিক ব্যায়াম
ধূমপান ছাড়তে চাইলে সবচেয়ে সহজ ও সবার জন্য উপযোগী ব্যায়াম হলো হাঁটা। মাত্র ১৫ মিনিটের জোরে হাঁটা মন ভালো করে, তীব্র আকাঙ্ক্ষা কমায়।
সাইক্লিং, জগিং, সাঁতার কাটা, নাচ—সব ধরনের অ্যারোবিক ব্যায়াম হৃদস্পন্দন বাড়ায়, এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায় এবং ধূমপানের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
কীভাবে শুরু করবেন:
প্রতিদিন ১০ হাজার ধাপ হাঁটার লক্ষ্য রাখুন, অথবা সপ্তাহে ৩–৫ দিন ২০–৩০ মিনিট মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামটাকে মজা করে তুলুন—বাড়ির আশপাশে হাঁটা, বন্ধুর সঙ্গে সাইকেল চালানো বা প্রিয় গানে নাচাই হোক আপনার ব্যায়ামের পছন্দ।
২. শ্বাসব্যায়াম ও যোগাসন
তামাক ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। প্রণায়াম ও সহজ যোগাসন চাপ কমায়, ফুসফুস ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
কীভাবে শুরু করবেন:
প্রতিদিন সকালে ৫ মিনিট করে ধীরে ও গভীর শ্বাস নিন। এক নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে অন্য নাক দিয়ে ছাড়ুন। এর সঙ্গে কিছু সহজ যোগাসন যুক্ত করুন যা শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং আপনাকে প্রশান্তি দেয়।
৩. স্ট্রেচিং ও নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম
নিকোটিন ছাড়লে শরীরে অস্থিরতা ও খিটখিটে মেজাজ দেখা দেয়। স্ট্রেচিং ব্যায়াম শরীরের পেশি শিথিল করে, নমনীয়তা বাড়ায় এবং সার্বিকভাবে ভালোলাগার অনুভূতি এনে দেয়।
কীভাবে শুরু করবেন:
সকাল বা সন্ধ্যায় ৫–১০ মিনিট স্ট্রেচিং করুন। ঘাড় ঘোরানো, কাঁধ টান, উরু ও কোমর স্ট্রেচিং, মেরুদণ্ড মোচড়ানো জাতীয় ব্যায়ামে মনোযোগ দিন। এগুলো শুধু মানসিক চাপ কমায় না, বরং তামাকের প্রতি মনোযোগ সরিয়ে রাখে।
৪. রেসিস্টেন্স ও শক্তিবর্ধক ব্যায়াম
স্কোয়াট, পুশ-আপ, লাঞ্জ, প্ল্যাঙ্ক জাতীয় ব্যায়াম ধীরে ধীরে বাড়িয়ে করলে দেহ ও মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি শরীর গঠনে সহায়ক, শরীরচর্চার আগ্রহ বাড়ায় এবং বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে।
কীভাবে শুরু করবেন:
প্রথমে শরীরের নিজের ওজন নির্ভর ব্যায়ামে শুরু করুন, সপ্তাহে ২–৩ দিন ১০–১৫ মিনিট করে। পরে হালকা ওয়েট বা রেসিস্টেন্স ব্যান্ড ব্যবহার করে আরও উন্নত করা যেতে পারে।
৫. সঙ্গীত থেরাপি ও সচল বিরতি
সঙ্গীত আমাদের মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে, মানসিক চাপ কমায় ও মন ভালো করে দেয়—যা ধূমপান ছাড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। নাচ, হাঁটা বা হালকা স্ট্রেচিংয়ের সঙ্গে সঙ্গীত মিলিয়ে নিলে তামাকের প্রতি মনোযোগ সরিয়ে রাখা সহজ হয়।
অতিরিক্ত বসে থাকাও মানসিক উদাসীনতা তৈরি করে, যা ধূমপানের ইচ্ছা বাড়ায়। তাই সচল বিরতি জরুরি।
কীভাবে শুরু করবেন:
একটি প্রিয় গান বা তালিকা তৈরি করুন। প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট নাচুন বা হাঁটুন। প্রয়োজনে গান শোনার সময় হালকা শ্বাসব্যায়ামও করতে পারেন। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ান, স্ট্রেচিং করুন বা সংক্ষিপ্ত হাঁটা দিন।
ব্যায়াম কিভাবে সাহায্য করে?
ব্যায়াম করলে ডোপামিন, সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিন নামক ‘ভালো লাগা’ হরমোন নিঃসরণ হয়, যেগুলো নিকোটিন সাময়িকভাবে বাড়ায়। ব্যায়াম সেই প্রয়োজনীয় হরমোনগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করে, তীব্র চাহিদা কমায়। পাশাপাশি ব্যায়াম ঘুম ভালো করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই
ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্তই আপনার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সচেতন সিদ্ধান্ত হতে পারে। সহজ ও উপভোগ্য ব্যায়াম আপনাকে ধূমপান ছাড়ার যাত্রায় সহায়ক হবে এবং আপনাকে এক নতুন জীবনের পথে এগিয়ে নেবে
আবির