
ছবি: সংগৃহীত।
সংরক্ষিত নারী আসনের প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ভোটের ভিত্তিতে নারী এমপি নির্বাচনের একটি নতুন প্রস্তাব তুলে ধরেছেন ড. শিব্বির আহমদ, যিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দলীয় আসনের সংখ্যা নয়, নারী ভোটারদের ভোটের ভিত্তিতে দলগুলোর প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া উচিত।
বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে দলগুলো তাদের জাতীয় সংসদে অর্জিত আসনসংখ্যার অনুপাতে নারীদের মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় নারী ভোটারদের মতামতের কোনো প্রতিফলন নেই বলে মনে করেন ড. শিব্বির। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের পরে শুধুমাত্র নারী ভোট আলাদাভাবে গণনা করে দেখা হবে, কোন দল কত শতাংশ নারী ভোট পেয়েছে। সেই অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "এতে নারীদের ভোটের গুরুত্ব বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো আর শুধু পুরুষ ভোটারদের সন্তুষ্ট রাখলেই চলবে না, তাদেরকে নারী ভোটারদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে দলগুলোকে নারীবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা সার্বিকভাবে দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে।"
ড. শিব্বির আরও যুক্ত করেন, “এই ব্যবস্থায় নারীদের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটবে সংসদে। কোনো দল কেবল আসন বেশি পেয়েছে বলে সংরক্ষিত নারী আসনেও আধিপত্য দেখাবে না। এমনকি কোনো দল সরাসরি আসন না জিতলেও যদি নারী ভোটে জনপ্রিয় হয়, তাহলে তারা শুধু নারী আসনে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে, যা নারীদের অংশগ্রহণে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।”
নারী এমপিদের মনোনয়নপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য ড. শিব্বির আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, নির্বাচনের আগেই দলগুলোকে তাদের সম্ভাব্য ৫০ জন নারী এমপির নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে, যাদের মধ্যে থেকে ভোট অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে।
তিনি বলেন, “এতে নারী ভোটাররা জানতে পারবেন কোন দল নারী সাংসদ হিসেবে কাদের তুলে ধরছে, তাদের যোগ্যতা কী এবং তারা সংসদে গিয়ে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন কি না। দলগুলো যদি কম যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে ভোট হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।”
বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন করার একটি দাবিও রয়েছে কিছু মহলে। তবে এই দাবি ‘অবাস্তব’ ও ‘নারীবিরোধী’ বলে মত দিয়েছেন ড. শিব্বির। তিনি বলেন, “একজন নারীকে যদি তিনটি আসন একত্র করে নির্বাচন করতে বলা হয়, সেটা অন্যায়। পুরুষ এমপিরা যেখানে একটি আসনে নির্বাচন করেন, সেখানে নারীদের উপর তিনগুণ চাপ সৃষ্টি করা হবে। এটা নারীদের জন্য রাজনীতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।”
তার মতে, সংরক্ষিত আসন একটি ট্রানজিশনাল ব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদে এ ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না। তবে এখনই কোটা তুলে দেওয়া উচিত নয়। বরং ধীরে ধীরে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এক সময় এই কোটা প্রথা বিলুপ্তির দিকে যাওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ৩০০ আসনে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রস্তাবকে অপ্রয়োগযোগ্য বলে মত দেন তিনি। তার মতে, নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রাকৃতিকভাবেই বাড়তে হবে, কোনো চাপিয়ে দেওয়া শর্তে নয়।
ড. শিব্বির আহমদের এই প্রস্তাব নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে, সংরক্ষিত নারী আসন কীভাবে আরও কার্যকর, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করা যায়। তার মতে, "আমরা যদি সত্যিই নারীদের ক্ষমতায়ন চাই, তাহলে শুধু কোটা নয়, তার ভিত্তিভূমিটাও ঠিক করতে হবে।"
নুসরাত