
ছবি: জনকণ্ঠ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ৮নং ভোগনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মোছাঃ ছকিনা খাতুন একজন বিধবা, বয়স প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। তার কপালে নেই সুখ, ঘর বলে যা কিছু আছে তা শুধুই নামমাত্র। ছেঁড়া পুরনো টিনের ছাউনি আর কাঠের ভাঙা বেড়ায় ঘেরা একটি ছোট ঘরই তার ঠিকানা। বর্ষা এলেই তার দুঃখ আরও বেড়ে যায়। টিনের ছিদ্র দিয়ে অনবরত পানি পড়ে, মেঝেতে পানি জমে। ভেতরে থাকা খাট, বিছানা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। সংসার চালাতে গিয়ে আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ছকিনা খাতুনের। দিন চলে কোনো রকমে মানুষের বাড়ি গিয়ে কাজ করে, কেউ সাহায্য দিলে খায়, না হলে উপোসই থেকে যান। বয়সের ভারে কাজও এখন ঠিকমতো হয় না, তবুও পেটের দায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান।
ছকিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "বৃষ্টির সময় তো ঘরেই দাঁড়ানো যায় না। পানি এমন পড়ে যে মনে হয় ঘরের ভেতরেই মেঘ ছুঁয়ে বৃষ্টি পড়ছে। রাতের বেলা ভিজে ভিজে ঘুমাতে হয়। ঘর ঠিক করার মতো কপাল আমার নাই রে বাবা।"
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাদের আলী বলেন, "ছকিনা খাতুন অনেক দিন ধরেই খুব কষ্টে আছেন। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে মাঝে মাঝে সাহায্য করি, কিন্তু তা দিয়ে কি চলে? সরকারিভাবে একটা ঘর পেলে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁইটা হতো।"
আরেকজন বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, "বৃষ্টি হলেই আমরা গিয়ে দেখি তার ঘরের ভেতর সব ভিজে যায়। একজন নারী হয়ে এত কষ্টের মধ্যে কিভাবে বেঁচে আছেন ভাবলেই কষ্ট হয়।"
৮নং ভোগনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, "ছকিনা খাতুনের বিষয়টি আমরা জানি। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য একটি সরকারি ঘর বরাদ্দের চেষ্টা করছি। আশা করছি শিগগিরই ব্যবস্থা হবে।"
ভোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাজিউর ইসলাম রাজু বলেন, "আমাদের ইউনিয়নে অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে, তবে ছকিনা খাতুনের অবস্থা খুবই করুণ। আমি নিজে দেখেছি তাঁর ঘরের অবস্থা। আগামী বরাদ্দে তাকে একটি ঘর দেওয়ার সুপারিশ উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাবো। মানবিক কারণে তাকে সহযোগিতা করা দরকার।"
বীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, "বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ছকিনা খাতুনের মতো অসহায় ব্যক্তিদের জন্য আমাদের সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম রয়েছে। দ্রুত যাচাই করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
আবির