ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

৪০ বছর জুতা সেলাই আর রং করেই চলে সংসার

সোহেল রানা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা সদর

প্রকাশিত: ০৮:২০, ১৬ জুন ২০২৫

৪০ বছর জুতা সেলাই আর রং করেই চলে সংসার

ছবি: জনকণ্ঠ

৫ টাকা ১০ টাকা তার থেকে বেশি হলে জুতা রং করা বা কালার করে পুরাতন জুতা, সেন্ডেল সেলাই করে নতুন রূপ দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন শ্রী আনান্দ দাশ (৫৫)। পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর (বাকছিপাড়া) বাজারে দীর্ঘ ৪০ বছর কাজ করছেন তিনি। কাজের শুরুর দিকে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা, ২ টাকায় কাজ করেছেন। এখন বর্তমান সর্বনিম্ন কাজ করেন ১০ টাকা। সময়ের পরিবর্তন দ্রব্যমূল্যের আকাশ-পাতাল পরিবর্তনে কাজের পারিশ্রমিক একটু বেড়েছে বলে জানান শ্রী আনান্দ দাশ। 

তাদের সমাজের সব চেয়ে নিম্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু তাদের পরিশ্রম আর সাধনায় উচ্চ শিক্ষিত সমাজের মানুষ বিভিন্ন ধরণের জুতা পায়ে দিয়ে থাকেন। জুতা বা সেন্ডেল পায়ে দিয়েই অফিস আদালত বা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন।

শ্রী আনান্দ দাশ(৫৫) বলেন, "আমি আমার ছেলেকে মাস্টার্স পাশ করিয়েছি এই কাজ করে। আমার মেয়েদের শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছি। আমার কর্মে আমার সন্তানরা বাঁচে।"

পাবনা সদরের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, "আসলে মুচিদের সম্মানের সাথে কথা বলা উচিত এবং তাদের সমাজে একটা মর্যদা দেওয়া উচিত। তাদের নিচু চোখে দেখার কোন সুযোগ নাই। আমরা তাদের যথাযথ সম্মান ও সামাজিক মর্যাদা দিয়ে থাকি।"

এক প্রশ্নের জবাবে শ্রী আনান্দ দাশ বলেন, "কাজের শুরু দিকে তখন মানুষ একটু আমাদের অন্য চোখে দেখতো। কিন্তু দশ বছর পূর্বে থেকেই মানুষের এমন আচারণ পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক ভালো আছি।"

সদর উপজেলার আজিজল শেখ তার কাছে এসেছে জুতা সেলাই করতে। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, "আনান্দর সাথে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। দীর্ঘ দিনের পরিচয় আমাদের। তার হাতের কাজ ও ব্যবহার
অনেক ভালো।"

এক মহিলা তার কাপড় নিয়ে যাওয়ার ব্যাগ নিয়ে এসেছেন মেরামত করার জন্য। তিনি এই প্রতিবেদকে জানান, "আনান্দ ভাই ন্যায্য মুজুরি নিয়ে কাজ করেন। জুতা, ব্যাগ, সেন্ডেল মনযোগ সহকারে মেরামত করে থাকে দীর্ঘ দিন টেকসই হয়। এই জন্য আমরা তার কাছে কাজ নিয়ে আসি।"

পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন শুভ বলেন, "আমরা তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ দেখছি এই জালালপুর বাজারে কাজ করছেন। তিনি মুচির কাজের মাধ্যমেই সুনাম অর্জন করেছেন। তার কাজ, তার ধর্মকে আমরা সম্মান করি। কোনদিন দেখি নাই কারো সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে। অত্যন্ত নম্র-ভদ্র মানুষ তিনি।

আবির

×