ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

মিঠাপুকুর উপজেলা: নামের পেছনে যে পুকুর, তার আজ বেহাল দশা

মোঃ সুজা উদ্দিন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রংপুর

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৫ জুন ২০২৫

মিঠাপুকুর উপজেলা: নামের পেছনে যে পুকুর, তার আজ বেহাল দশা

ছবি: জনকণ্ঠ

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার নামকরণের পেছনে রয়েছে এক বিশাল ও সুস্বাদু পুকুরের গল্প। জনশ্রুতি আছে, ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে সেনাপতি মীর জুমলা কোচবিহার ও আসাম অভিযানকালে মিঠাপুকুর মৌজায় ছাউনি স্থাপন করেন। সে সময় তার বিশাল সেনাবাহিনীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে তিনি এই ৩০ একরের বিশাল পুকুরটি খনন ও সংস্কার করেন। পুকুরটির পানি এতটাই সুস্বাদু ছিল যে, মীর জুমলা এর নাম দেন "মিঠাপুকুর"।

এই পুকুরকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে জনবসতি গড়ে ওঠে এবং পুকুরের নাম অনুসারেই এলাকার নাম এবং পরবর্তীতে উপজেলার নামও মিঠাপুকুর হয়। কেউ কেউ আবার শাহ ইসমাইল গাজীর আমলেও এই পুকুরের অস্তিত্বের কথা বলে থাকেন।

এই ঐতিহাসিক পুকুরটি বর্তমান মিঠাপুকুর থানা-পুলিশ ও কলেজের পেছনের দিকে অবস্থিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নামকরণের উৎস এই গুরুত্বপূর্ণ পুকুরটি বর্তমানে অনেকটাই অবহেলিত। এর পাড়গুলো সানবাঁধানো বা আধুনিকীকরণ না করায় এটি তার আকর্ষণ অনেকটাই হারিয়েছে। অথচ এর বিশাল আয়তন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে সহজেই একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থানে রূপান্তরিত করা যেত।

সচেতন মহল মনে করেন, মিঠাপুকুরের এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি সংস্কারের অভাবে তার জৌলুস হারাচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষের এই পুকুর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। পুকুরটির পাড়গুলো সানবাঁধানো করে, চারপাশে বসার ব্যবস্থা রেখে এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করে এটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন মিঠাপুকুরের ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে, তেমনই এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই পুকুরের সংস্কার কেবল একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে রক্ষা করবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মিঠাপুকুরের নামকরণের পেছনের গল্পটিকেও জীবন্ত করে তুলবে।

মুমু ২

×