
ছবি: সংগৃহীত
ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাবা দ্বীপে প্রতিবছর ঘটে এক ব্যতিক্রমী উৎসব। ২,৩২৯ মিটার উঁচু সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ব্রমোর কিনারায় জড়ো হন শত শত মানুষ—জীবনের ঝুঁকি নিয়েই। উদ্দেশ্য একটাই—আগ্নেয়গিরির দেবতাকে উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট করা, যাতে ঠিক সময়ে নামে বৃষ্টি, ফলে হয় সোনালী ফসল, আর গ্রাম বাঁচে দুর্যোগ থেকে।
তেলেসে নামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক জাতিগোষ্ঠীর শত বছরের এই রীতিতে প্রতি বছর কাসাদা মাসের ১৪ তারিখে আয়োজিত হয় উৎসব—‘ইয়াথনিয়া কাসাদা’। ভোর থেকেই মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে চড়তে থাকেন পাহাড়ে। পৌঁছে যান আগ্নেয়গিরির চূড়ায়, যেখানে আজও গর্ত থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। সেখান থেকেই আগুনমুখে ছুড়ে দেন তারা নিজেদের ধনসম্পদ, ফসল, এমনকি জীবন্ত পশুও।
কেউ উপহার দেন ধান, কেউ ফল, সবজি, ছাগল কিংবা মুরগি। আর কেউ কেউ এমনকি নিজের সন্তানের জীবনও উৎসর্গ করেন। কারণ, এই বিশ্বাস তাদের গাঁথা আছে পুরনো এক কিংবদন্তির সঙ্গে।
প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, এক সময় রোরো আন্তেং ও তাঁর স্বামী জোকোসেগার সন্তান পাওয়ার আশায় প্রার্থনা করেছিলেন আগ্নেয়গিরির দেবতার কাছে। দেবতা তাঁদের ২৫টি সন্তান দেন, তবে শর্ত ছিল—প্রথম সন্তানকে উৎসর্গ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সত্যিই তাঁদের প্রথম সন্তানকে ছুড়ে দেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির গহ্বরে। সেই আত্মত্যাগ আজও স্মরণ করে তেঙ্গেরিস জনগণ।
তাই তারা এখনো প্রতিবছর এই উৎসবে অংশ নিয়ে তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি উৎসর্গ করেন। অনেকেই আবার আগ্নেয়গিরির নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন জাল হাতে, সেই উপহার ধরার আশায়। কারণ অনেকের বিশ্বাস—সেই উপহার যদি হাতে আসে, তবে ঘরে আসবে সৌভাগ্য।
এই উৎসবে মিশে যায় আগুন, বিশ্বাস, ইতিহাস আর জীবনের গভীরতম আবেগ। এটি শুধু ধর্মীয় রীতিই নয়, বরং তেঙ্গেরিস জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির অঙ্গ, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ফরিদ