ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধোন্মত্ত আচরণ আর গাজায় বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে যখন বিশ্বব্যাপী সমালোচনা তুঙ্গে, তখন দেশটির ভেতরে একটি পুরনো ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী আবারো ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে—অষ্টম দশকের অভিশাপ, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Curse of the Eighth Decade এবং আরবিতে Lanatul Aqdis Samin।
ভবিষ্যদ্বাণী কী বলে?
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তালমুদে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র টিকবে না ৮০ বছরের বেশি—এবং তার পতন বাইরের আক্রমণে নয়, ঘটবে ভেতরের দ্বন্দ্ব থেকে। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘিরে তৈরি হওয়া ‘অভিশাপের’ ধারণা ইতোমধ্যে ইসরাইলি রাজনীতিকদের মুখেও উঠে এসেছে।
গত ২০০০ বছরে ইহুদিরা বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- নবী দাউদ (আ.)-এর কিংডম
- হাসমোনিয়ান রাজত্ব
কিন্তু কোনটিই ৮০ বছরের বেশি টিকতে পারেনি। আর আজকের ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৪৮ সালে। ফলে ২০২৮ সালে তারা পা রাখবে নিজেদের ৮০তম বর্ষে। এখন ২০২৫—মানে হাতে সময় মাত্র তিন বছর। এতে অনেক ইসরাইলির মনে ভয়—তবে কি এবারও ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে?
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক নিজেই ইসরাইলি দৈনিক Yedioth Ahronoth-এ এক নিবন্ধে এই অভিশাপ প্রসঙ্গে বলেন, “দেশের সমাজব্যবস্থা এখন এতটাই বিভক্ত, যা রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের জন্য হুমকি।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন বলেন, “ইসরাইলে ৩৮% সেকুলার, ১৫% জায়নিস্ট, ২৫% আরব, এবং ২৫% অতি-ধর্মপ্রাণ ইহুদি। এদের মধ্যে বিভেদ এতটাই বেড়েছে যে ইহুদি রাষ্ট্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে।”
এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও স্বীকার করেছেন এই উদ্বেগ। তিনি একাধিকবার বলেছেন, তার সরকারই ইসরাইলকে “অষ্টম দশকের অভিশাপ” থেকে রক্ষা করতে পারবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন, বিচারব্যবস্থা সংকট, সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ এবং গাজা বা পশ্চিমতীরে অমানবিক যুদ্ধনীতির পেছনে একরকম আত্মরক্ষা মনস্তত্ত্ব কাজ করছে।
তাদের ভাষায়:
“ভবিষ্যতের পতনের ভয়েই ইসরাইল আজ আরও বেশি ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে।” ইসরাইল এখন শুধু যুদ্ধ করছে গাজার বিরুদ্ধে নয়, যুদ্ধ করছে নিজেদের ভাগ্য ও ভবিষ্যতের সঙ্গে। তালমুদের ওই ‘অভিশাপ’ যদি কেবল ধর্মীয় কিংবদন্তিই হয়, তবু তা আজ তাদের রাষ্ট্রচিন্তা ও ভূরাজনীতির বাস্তবতাতে ভয়ানকভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।
আঁখি
