
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর
বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে খুব শীঘ্রই একীভূত করা হবে। তবে এই ব্যাংকগুলোর কর্মীদের আপাতত চাকরি হারানোর ভয় নেই বলে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। লন্ডন সফর শেষে রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
জানা যায়, চলতি বছরের শেষের দিকে এই নতুন ব্যাংকের উদ্বোধন করা হবে। ব্যাংকটির নাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। নতুন আইনে নতুন নিয়মে করা ব্যাংকটির ডিপোজিটরদের জন্য থাকছে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা। সরকারের পক্ষ থেকে থাকছে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপিটাল সুবিধা। তবে প্রথম ধাপে ১০ হাজার কোটি টাকা। পরের ধাপে বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে।
ব্যাংকগুলোর একীভূত করার বিষয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে শাখাগুলো স্থানান্তর করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহরে বেশি, সেসব ব্যাংককে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নির্বাচনের সঙ্গে ব্যাংক মার্জারের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব পরবর্তী সরকার এসে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মার্জার করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আর্থিক সংকটে পড়া পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, অথচ বিনিয়োগ ছাড়িয়ে গেছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি, এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা এখন খেলাপি, যা মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৯৭, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৯৫, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৬২ এবং এক্সিম ব্যাংকে ৪৮.২০ শতাংশ। ৭৭৯টি শাখা, ৬৯৮ উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট আউটলেট, ৯৭৫ এটিএম বুথ এবং ১৫ হাজারের বেশি জনবল নিয়ে এই পাঁচ ব্যাংক এখন বিশাল এক দায় ও ঝুঁকির পাহাড়ে দাঁড়িয়ে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা শুনেছি এই ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীরা টাকা তুলে নিচ্ছে, এটি উদ্বগের বিষয়। আপাতত দৃশ্যমান কিছু কাজ করে গ্রাহকদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাফিউজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো একীভূত হলে ভালোই হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সহযোিগতা করেছে। এখন আমাদের নিজেদের তহবিল দিয়েই পরিচালনা করছি। যা গ্রাহকদের জন্য এখন স্বস্তির খবর।
তিনি জানান, একীভূতকরণের বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এই সাড়ে তিন মাসে ব্যাংকগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি টিম কাজ করবে। টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও যোগ্য লোক দেওয়া হবে। ব্যাংক কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো একীভূত হলেও এই মুহূর্তে চাকরি হারানোর কোনো ভয় নেই।
ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে শক্তিশালী একটি ইসলামী ব্যাংক করা হবে। আমানতকারীর সুরক্ষা দেওয়া এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংক খাতের জন্য যা ইতিবাচক।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো: সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকও একীভূতকরণের আলোচনায় ছিল। তবে ব্যাংকটিতে বিদেশি মালিকানা থাকায় এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া কোনো সম্পদ উদ্ধার সম্ভব নয়। এ জন্য আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনি নথিপত্র তৈরি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক আমাদের দাবি যথাযথ কি না। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে। ড. আহসান এইচ মনসুর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যেখানে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনা করে সমাধান খুঁজবেন।
তিনি জানান, কোন পথে এগোনো হবে, আদালত নাকি এডিআর, সেটি নির্ধারণ করবে সরকার। সরকারের নির্দেশনা পেলেই বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে। গভর্নর বলেন, দেশীয় সম্পদের জন্য দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনা করতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।