বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন
রাত পোহালেই পহেলা আগস্ট। এদিন থেকেই মার্কিণ সরকার কর্তৃক আরোপিত পাল্টা শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা। এরই মধ্যে চলমান আছে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা আলোচনার তৃতীয় পর্ব। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে তেমন কোনো সুফল না আসলেও এ পর্বে আশাবাদী বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে প্রথম দিনের আলোচনা থেকেই উল্লেখযোগ্য হারে শুল্কহ্রাসের ইংগিত মিলেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
এ রিপোর্ট যখন পাঠকের হাতে যাচ্ছে, ততক্ষণে (বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায়) দ্বিতীয় দিনের বৈঠকও শেষ হবে। আজ বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায় শুরু হওয়া তৃতীয় পর্বের শেষদিনের বৈঠক থেকে সুষ্পষ্ট ঘোষনা আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর যদি সমঝোতা না হয় তাহলে আগামীকাল শুক্রবার থেকেই বাংলাদেশের রফতানিকারকদের গুনতে হবে ৩৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে হোয়াটস অ্যাপে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলে আমরা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।
আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বাণিজ্য সচিব বলেন, তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আজ ও আগামীকাল (বুধ ও বৃহষ্পতিবার) আমাদের মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি। সূত্রমতে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ওয়াশিংটন ডিসিতে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হয়। তিন দিনের আলোচনা বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসার আগেই দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো তথা শুল্ক ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন পেতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশকিছু পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। পাল্টা শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এর মধ্যে উড়োজাহাজ, গম, তেল ও তুলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও বেশকিছু পণ্য কেনার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। আমদানির এসব উদ্যোগকে শুল্ক নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার ‘উদ্দীপক’ হিসেবে দেখছে ঢাকা।
জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পাঁচদিনের মাথায় ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। গত ৯ জুলাই ছিল তিন মাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ দিন।
ঠিক তার আগের দিন ৮ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্ক হারে সমঝোতা করতে পেরেছে।
এদিকে বার্ত সংস্থা সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুদিন ধরে আলোচনাধীন বাণিজ্য চুক্তি যদি চূড়ান্ত না হয়, তাহলে ভারতের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। এক সাংবাদিক জানতে চান, ভারত কি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয়, তাই হবে। ভারত আমার বন্ধু, কিন্তু...।’
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সোমবার সিএনবিসিকে বলেন, ‘ভারত কিছু খাত উন্মুক্ত করতে ইচ্ছুক, আমরাও আলোচনায় আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা দরকার। তারা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কতটা উচ্চাভিলাষী, সেটা বুঝতে এ আলোচনা দরকার।’
প্যানেল হু
