
ছবি: জনকণ্ঠ
যেন নিয়ম-কানুনের কোন বালাই নাই। চাঁদাবাজি স্টাইলে প্রতিমণ ইলিশ বিক্রিকালে ৪২-৪৩ থেকে ৪৪ কেজি পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। দখিনের বৃহৎ ইলিশের মোকাম পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আলীপুর-মহিপুরে ফ্রি-স্টাইলে এসব চলছে। ওজন করা হচ্ছে পুরনো লোহা কিংবা কাঠের দাড়িপাল্লায়। শতকরা ৯৫ জনের আড়তে নেই ডিজিটাল পদ্ধতির মিটার। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জীবনের নানা ঝুঁকি নিয়ে সাগরবক্ষে জেলেদের আহরিত সোনার দামের ইলিশ বিক্রি করতে গিয়ে চরমভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।
মণপ্রতি গড়ে ২-৩ কেজি বেশি ইলিশ নেওয়া হচ্ছে। এক শ্রেণির আড়ত মালিকসহ মাপ দেওয়ার সরদাররা জেলেদেরও এমন সর্বনাশ করছে। এক শ’ মণ ইলিশ বিক্রি করলে অন্তত চার-থেকে পাঁচ মণ ইলিশ বিনা টাকায় হাতিয়ে নিচ্ছে ক্রেতারা। বর্তমান বাজারে ৫০০ গ্রাম থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত সাইজের ইলিশের মণ কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এর বেশিও রয়েছে বড় সাইজের ইলিশ। মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে গত ১১ জুন অবরোধ শেষ হওয়ার পওে ১২ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে মহিপুর-আলীপুর মোকামে ২৬৫ টন ইলিশের আমদানি হয়েছে। জেলেদের হিসাবে ২৭ মনে এক টন। সেই হিসাবে কমপক্ষে সাত হাজার এক শ’ ৫৫ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে।
মণ প্রতি কমপক্ষে দুই কেজি করে বেশি নেওয়া হলেও ৩৫৭ মণ ইলিশ বিনামূল্যে মধ্যসত্বভোগী চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। যা টাকার অংকে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা। গত একমাসে দরিদ্র জেলেদের কাছ থেকে এ পরিমাণ টাকার ইলিশ ওজনের গ্যাড়াকলে আটকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলেরা দাদনসহ নানা বেড়াজালে আটকে থাকার কারণে ওজনে মণ প্রতি দুই-তিন কেজি বেশি দিতে বাধ্য হচ্ছে। চোখের সামনেই তাদের জীবনঝুঁকির উপার্জনের অন্তত তিন কোটি টাকা গত এক মাসে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। মৎস্য বিভাগসহ প্রশাসনের সকল স্তরের সামনেই এভাবে জেলেদের সর্বনাশ করা হচ্ছে। ঠকানো হচ্ছে মহিপুর-আলীপুরেও অন্তত ১১০ টি মাছের আড়ত রয়েছে। যার ৯৫ ভাগ আড়তে মাপ চলে দাড়িপাল্লায়।
ভুক্তভোগী ট্রলার মালিক ও মাঝি সমিতির উপদেষ্টা মোঃ আবু হানিফ বলেন, ‘আমরা জুলুমের মধ্যে আটকা আছি। কেউ মিটারে মাপ দেয় না। ওজনে মণ প্রতি ২-৩ থেকে চার কেজি পর্যন্ত বেশি নেয়। আড়ত মালিকরা কোন নিয়ম-কানুন মানেন না।’
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে আশরাফ আলী জানান, ২২-২৩ জন জেলে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইলিশ ধরে বিক্রি করতে আনলে পুরনো কাটায় (দাড়িপাল্লায়) মাপার সময় একটু করে ঝুল দেলেও মণ প্রতি দুই-তিন কেজি মাছ বেশি চলে যায়। মাছের মাপের সরদাররা এই অমানবিক কাজটা করেন। দিন শেষে বাড়তি মাছের টাকা আড়ত মালিকের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। অধিকাংশ জেলেরা এনিয়ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেন। এমন অমানবিকভাবে তাদের ঠাকানো ঠিক নয় বলেও জেলেরা হতাশা প্রকাশ করেন। ভুক্তভোগী জেলে ও ট্রলার মালিকরা এর থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন। তারা এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চেয়েছেন। এ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তখন পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট এক লিখিত চিঠিতে ডিজিটাল পদ্ধতির পরিমাপ ব্যবহারের জন্য মহিপুর, আলীপুর, কুয়াকাটার সকল মৎস্য আড়তমালিক ও ক্রেতা বিক্রেতাদের নির্দেশণা দেন। এরপরে কিছুদিন সর্বোচ্চ ৬-৭টি আড়তে এই পদ্ধতির মাপ শুরু করলেও বাকিরা দাড়িপাল্লার প্রতারণার মাপ বহাল রেখেছেন। তবে জেলেরা জানান আলীপুরের রহিম খানের খান ফিসে ডিজিটাল পদ্ধতির মাপ সচল রয়েছে।
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহম্মেদ রাজা জানান, ওই নির্দেশনার পরে আমরা অনেকেই ডিজিটাল পদ্ধতির মাপ চালু করেছি। বিষয়টি আবার চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, গত ১১ জুন অবরোধ শেষ হওয়ার পরে গত এক মাসে মহিপুর-আলীপুর মোকামে ২৬৫ টন ইলিশের আমদানি হয়েছে। এছাড়া আরও ১৩২ মেট্রিকটন সামুদ্রিক মাছের আমদানি হয়েছে। আর যাতে ইলিশসহ সকল মাছ বেচাকেনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিতে তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
আবির