
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবার কানাডা সাহসী অবস্থান গ্রহণ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক ঘোষণায় জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কানাডা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করল, যারা ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশায় কানাডা অপেক্ষা করছিল, তবে বর্তমান বাস্তবতায় এই ধারণা আর টিকছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "যারা শান্তি চায়, তাদের পাশেই দাঁড়াতে হবে এখন।"
তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এমনকি ২০২৬ সালের নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনে হামাস অংশ নিতে পারবে না বলেও তিনি ঘোষণা দেন। যদিও এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, তবুও কার্নি বলেন, “শান্তির জন্য সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই।”
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এই স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে “হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “তার কথায় কিছুই পরিবর্তন হবে না।” একইভাবে তিনি যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়েছেন।
এই অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে মানুষের দুর্দশা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে “গণহত্যা” বলে চিহ্নিত করেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এদিকে কানাডা ২০২৪ সালে ঘোষণা করেছিল যে তারা ইসরায়েলে নতুন অস্ত্র রপ্তানি করবে না। কিন্তু সদ্যপ্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গেছে, কর রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কানাডা এখনো ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এতে সরকার “মিথ্যার জাল” তৈরি করছে বলে অভিযোগ এনেছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।
কানাডার মুসলিম সংগঠন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস, প্রধানমন্ত্রী কার্নির ঘোষণাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানালেও এটিকে যথেষ্ট মনে করছে না। তারা চারটি দাবি তুলেছে: ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ, কানাডা-ইসরায়েল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পুনর্বিবেচনা এবং গাজা থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
সংগঠনটি আরও মন্তব্য করে, “যেভাবে ট্রাম্প প্রশাসন গাজা দখলের পক্ষে কাজ করছে এবং একইসাথে কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার চিন্তা করছে, সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখা এখন জরুরি।”
মুমু ২