ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

পরিবেশবান্ধব ফাইবার নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন নিটার শিক্ষার্থী মারুফের 

মিঠুন দাস মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নিটার

প্রকাশিত: ০২:০৪, ১ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ০২:০৫, ১ আগস্ট ২০২৫

পরিবেশবান্ধব ফাইবার নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন নিটার শিক্ষার্থী মারুফের 

সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ (নিটার)-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ মারুফ হোসাইন সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের একটি রিসার্চ পেপার প্রকাশ করেছেন। গবেষণাটির মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘ন্যাচারাল ফাইবার’। তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার প্রেক্ষাপট, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন "দৈনিক জনকণ্ঠ" পত্রিকার কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার মিঠুন দাস মিঠু'র সঙ্গে।

জ্বি কেমন আছেন? আপনার ব্যাপারে সংক্ষেপে কিছু বলুন।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। আমি মোঃ মারুফ হোসেন, নিটার-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বর্তমান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

আপনি কোন বিষয়ের উপর রিসার্চ করেছেন এবং এ বিষয়টি বেছে নেওয়ার পেছনে কী কারণ ছিল?

আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিল ‘ন্যাচারাল ফাইবার’। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে সিন্থেটিক ফাইবারের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এই ধরনের ফাইবার মূলত মানুষের তৈরি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশে থেকে যায়— যা প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই বাস্তবতা থেকেই আমার মনে হয়েছে, পরিবেশবান্ধব ও বায়োডিগ্রেডেবল (যা প্রকৃতিতে পঁচে মিশে যায়) উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। সেই চিন্তা থেকেই আমি এই গবেষণায় ন্যাচারাল ফাইবারের কার্যকারিতা, উপযোগিতা এবং বিকল্প সম্ভাবনার উপর কাজ করেছি।

গবেষণাকালীন সময় আপনি কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?

গবেষণা করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল— প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধার ঘাটতি, পর্যাপ্ত রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল ও কেমিক্যাল না পাওয়া, আর্থিক সহায়তার অভাব, এবং গবেষণার উপযোগী পরিবেশের অভাব। এসব সমস্যার কারণে একাধিকবার গবেষণার কার্যক্রম থেমে যেতে বসেছিল। তবে ধৈর্য্য আর চেষ্টা করে আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি।

আপনার গবেষণা-পত্রটি কোন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে? রিভিউ প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল এবং কতদিন লেগেছে?

আমার গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে Royal Society of Chemistry (RSC) Advances জার্নালে। এটি একটি Q1 র‍্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল, যার ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৪.৬। আমি গবেষণার কাজ শুরু করেছিলাম ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। একাডেমিক সময় শেষ হওয়ার পরেও প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা করে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়েছে স্যাম্পল ডেভেলপমেন্ট ও এনালাইসিসে। রিভিউ প্রক্রিয়া ছিল যথেষ্ট কঠিন ও সময়সাপেক্ষ, তবে গাইডদের সহায়তায় তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।

গবেষণায় আপনি কোন কোন মেশিনারি ব্যবহার করেছেন?

এই গবেষণায় আমি বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক মেশিনারি ব্যবহার করেছি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

Mechanical Combiner Machine

Universal Testing Machine (UTM)

FTIR (Fourier Transform Infrared Spectroscopy)

Advanced Fiber Information System (AFIS)

Transmission Electron Microscope (TEM)

X-ray Diffraction (XRD)

Thermo-Gravimetric Analyzer (TGA)

এসব মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ফাইবারের কাঠামো, তাপমাত্রা সহনশীলতা ও বায়োডিগ্রেডেবিলিটি বিশ্লেষণ করেছি।

গাইড কিংবা সুপারভাইজারের ভূমিকা কেমন ছিল? গবেষণাটি আপনি একা করেছিলেন নাকি একটি টিম হয়ে?

গবেষণায় গাইড বা সুপারভাইজারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গবেষণায় দু’জন অভিজ্ঞ সুপারভাইজার ছিলেন, যাঁদের গাইডলাইন ছাড়া এই গবেষণার সফলতা সম্ভব হতো না। আমরা একটি টিম হিসেবে কাজ করেছি এবং দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের আরও ১২ জন শিক্ষার্থী ও গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।

জুনিয়রদের আপনি কীভাবে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে চান? এবং যারা শুরু করতে চায়, তারা কীভাবে শুরু করবে বলে মনে করেন?

আমি জুনিয়রদের পরামর্শ দিবো— অন্তত দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই গবেষণার প্রতি আগ্রহী হতে হবে, আর যদি সম্ভব হয়, প্রথম বর্ষ থেকেই গবেষণার প্রাথমিক ধারণা নিতে শুরু করতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে কী ধরনের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সেই দিকগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত জার্নাল পড়া, নতুন বিষয়ে কৌতূহল থাকা, এবং সাসটেইনেবিলিটি, পরিবেশ সচেতনতা ও দীর্ঘস্থায়ী (longibility) উপকরণ নিয়ে ভাবার মধ্য দিয়েই একজন  ভালো গবেষকের যাত্রা শুরু হয়।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জুনিয়রদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিতে চাইলে কী বলতেন?

আমার মতে, গবেষণায় যুক্ত হওয়ার জন্য তিনটি বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন:
ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং সততা।
এই তিনটি গুণ ছাড়া কোনো গবেষণাই সফল হতে পারে না।

ভবিষ্যতের গবেষণা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

একজন নবীন গবেষক হিসেবে আমার লক্ষ্য হচ্ছে এমন কিছু উদ্ভাবন করা, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে উপকারে আসবে। পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ী উপকরণ উদ্ভাবন করে মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ ও নিরাপদ করার দিকেই আমি এগিয়ে যেতে চাই।

 

রাজু

আরো পড়ুন  

×