ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন শুল্ক বাড়ালেন ট্রাম্প? লক্ষ্য কারা, ক্ষতি কার?

প্রকাশিত: ২২:১৪, ১ আগস্ট ২০২৫

কেন শুল্ক বাড়ালেন ট্রাম্প? লক্ষ্য কারা, ক্ষতি কার?

ছবি: সংগৃহীত

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর কড়া শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১ আগস্ট থেকে কানাডার সকল পণ্যের ওপর ৩৫% শুল্ক কার্যকর হবে। এছাড়া ৭ আগস্ট থেকে আরও বহু দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্কহার কার্যকর করা হবে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এসব শুল্ক মূলত "বাণিজ্য বৈষম্য" দূর করতে এবং "আমেরিকান শিল্পকে রক্ষা" করার লক্ষ্যে আরোপ করা হয়েছে। তবে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি অনেককে হতবাক করেছে এবং ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়বে, কর্মসংস্থান সুরক্ষিত হবে এবং দেশের রাজস্ব বাড়বে। তিনি বলেন, “আমেরিকা বহু বছর ধরে বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়েছে, এখন সময় এসেছে শক্ত অবস্থান নেওয়ার।”

এছাড়া, মেক্সিকো, চীন এবং কানাডার বিরুদ্ধে শুল্ক ঘোষণার সময় ট্রাম্প দাবি করেন, এসব দেশকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার বন্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

যে পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হচ্ছে

  • স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০% শুল্ক
  • ১ আগস্ট থেকে কপার বা তামার ওপর ৫০% শুল্ক
  • বিদেশি গাড়ি, ইঞ্জিন ও অন্যান্য গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫% শুল্ক
  • ২০০% শুল্কের হুমকি ওষুধ আমদানির ওপর (তথ্য এখনও নিশ্চিত নয়)

২৯ আগস্ট থেকে ৮০০ ডলারের নিচে মূল্যমানের পণ্যের ওপর "ডি মিনিমিস" শুল্কছাড় বাতিল (চীন ও হংকং-এর জন্য আগেই বাতিল)

যে দেশগুলোর ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হচ্ছে (৭ আগস্ট থেকে)

  • কানাডা: ৩৫% শুল্ক (NAFTA চুক্তিভুক্ত কিছু পণ্য ছাড়া)
  • ব্রাজিল: ৫০%
  • ভারত: ২৫% + অতিরিক্ত অজ্ঞাত জরিমানা
  • ভিয়েতনাম: ২০%
  • ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন: ১৯%
  • জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া: ১৫%

তবে মেক্সিকোর ওপর শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত আবারও ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইইউর সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় গাড়ির ওপর ১৫% শুল্ক বসানো হবে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর ইউরোপ ০% শুল্ক দেবে। তবে চুক্তিটি কার্যকর হতে হলে ইইউর ২৭টি সদস্য দেশের অনুমোদন প্রয়োজন।

যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে কম (১০%) শুল্কে গাড়ি রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে। প্রতি বছর প্রথম ১ লাখ গাড়ির ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। তবে স্টিলের ওপর আগের মতো ২৫% শুল্ক বজায় থাকছে। শুল্কের কারণে বিভিন্ন কোম্পানি যেমন Nike, Adidas এবং Mattel (Barbie নির্মাতা) যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক সরাসরি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ২.৭%, যেখানে মে মাসে তা ছিল ২.৪%।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD) বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। তারা মনে করছে, ট্রাম্পের এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রই ক্ষতির মুখে পড়বে বেশি। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারেও ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক দেশই প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি দেশীয় উৎপাদন রক্ষার চেষ্টা হিসেবে দেখা গেলেও, তার আচমকা ও কঠোর সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক পরিবেশকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এর প্রভাব শুধু আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা ছড়িয়ে পড়বে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।

আঁখি

×