ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল: দরুদে সিক্ত হোক আপনার প্রতিটি মুহূর্ত

মো: হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ঢাকা

প্রকাশিত: ০২:০৯, ১ আগস্ট ২০২৫

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল: দরুদে সিক্ত হোক আপনার প্রতিটি মুহূর্ত

ব্যস্ত নাগরিক জীবনে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর চেয়ে শুক্রবার আসে এক ভিন্ন আমেজ নিয়ে। এই দিনটি শুধু ছুটির দিন নয়, মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি এক বিশেষ আধ্যাত্মিক মিলনমেলা ও ইবাদতের দিন। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের সুর, পরিচ্ছন্ন পোশাকে জুমার নামাজের প্রস্তুতি আর মুসল্লিদের ঢল—সব মিলিয়ে এক পবিত্র আবহ তৈরি হয়। এই বরকতময় দিনে এমন একটি আমল রয়েছে যা করা সবচেয়ে সহজ, কিন্তু এর প্রতিদান ও মর্যাদা আকাশচুম্বী। আর তা হলো, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অর্ঘ্য—দরুদ পাঠ।

শুক্রবারকে বলা হয় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ বা সপ্তাহের সেরা দিন। এই দিনের ফজিলত অপরিসীম। তবে এই দিনের অগণিত আমলের মধ্যে দরুদ পাঠকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভেবে দেখুন তো, যে নবীর উম্মত হতে পেরে আমরা গর্বিত, যে নবীর শাফায়াত ছাড়া পরকালে মুক্তি কঠিন, তাঁর জন্য একটু সময় ব্যয় করে দোয়া করাটা কত বড় সৌভাগ্যের!

কেন এই দিনে দরুদ পাঠ এত গুরুত্বপূর্ণ?

স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাদেরও নির্দেশ দেন দরুদ পাঠের জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুমিনদেরকে নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানোর সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬)।

বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়, যখন আমরা হাদিসের দিকে তাকাই। প্রিয় নবী (সা.) নিজেই এই দিনের বিশেষ আমল হিসেবে দরুদ পাঠকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ, তোমাদের দরুদ আমার কাছে সরাসরি পেশ করা হয়।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

এই হাদিসটি আমাদের মনে এক গভীর অনুভূতি তৈরি করে। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, জুমার দিনে আমাদের পাঠানো প্রতিটি দরুদ ও সালাম প্রিয় নবীর (সা.) কাছে পৌঁছে যায়। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?

এক দরুদে তিন প্রতিদান

দরুদ পাঠ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এর পেছনে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবিশ্বাস্য পুরস্কার। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।” (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১২৯৭) । অর্থাৎ, মাত্র একবার দরুদ পাঠের বিনিময়ে আমরা তিনটি অসাধারণ পুরস্কার পাচ্ছি—আল্লাহর রহমত, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং মর্যাদার উন্নতি। এটি এমন এক ব্যবসা, যেখানে লাভ ছাড়া কোনো লোকসান নেই।

দরুদ হোক আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী

জুমার দিনে দরুদ পাঠের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থানের প্রয়োজন নেই। আপনি অফিসে যাওয়ার পথে গাড়িতে, কাজের ফাঁকে সামান্য অবসরে, কিংবা ঘরে হাঁটাচলার সময়ও মনে মনে বা মুখে দরুদ পাঠ করতে পারেন। নামাজের পর পঠিত ‘দরুদে ইবরাহিম’ শ্রেষ্ঠ দরুদ হলেও, চলতে-ফিরতে ছোট দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পাঠ করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

আসুন, এই জুমার দিনে আমরা আমাদের জিহ্বাকে ব্যস্ত রাখি প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রশংসায়। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে দরুদের সুবাসে معطر করে তুলি। এই সহজ আমলটিই আমাদের জীবনকে রহমতে পরিপূর্ণ করতে পারে এবং পরকালে এনে দিতে পারে নবীর সুপারিশ লাভের সুবর্ণ সুযোগ।

 

রাজু

×