
ছবি: সংগৃহীত
দ্বিতীয় পর্ব
পশ্চিমা সভ্যতা আজ নিঃসন্দেহে বিশ্বের নেতৃত্বে। প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির বিস্ময়কর বিকাশের ফলে তারা শুধু নিজেদের নয়, সারা বিশ্বের দিকনির্দেশক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই আধিপত্যের ছায়ায় মুসলিম বিশ্ব আজ এক গভীর সংকট ও সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
পশ্চিমা বিনোদন, পোশাক, ভাষা ও জীবনধারা মুসলিম সমাজে ক্রমাগত প্রভাব ফেলছে। এর ফলে অনেক মুসলিম তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে নিজেদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ছে।
পশ্চিমা আধুনিকতা প্রায়শই ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবর্তে বস্তুবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাকে প্রাধান্য দেয়। এতে মুসলিম সমাজে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে—আধুনিকতার সঙ্গে দ্বীনের ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা যাবে?
পশ্চিমা শক্তির রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক আধিপত্য অনেক মুসলিম দেশে অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যের জন্ম দিয়েছে। ফলে স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে এসব চ্যালেঞ্জই নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, যা ইসলামের এক নতুন পুনর্জাগরণকে উজ্জীবিত করছে।
আজকের মুসলিম সমাজ আগের চেয়ে বেশি করে নিজের ইতিহাস, পরিচয় ও বিশ্বাসের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম প্রশ্ন করছে—খাঁটি ইসলাম কী? কীভাবে তা আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিকভাবে জীবিত রাখা যায়?
পশ্চিমা জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করে, অনেক মুসলিম দেশ ও সংগঠন আজ তা নিজের উন্নয়ন, গবেষণা, শিক্ষা ও দাওয়াহ প্রচারে ব্যবহার করছে।
বিশ্ব এখন একটি “গ্লোবাল ভিলেজ”। এর ফলে ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছানোর নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমে মুসলমানদের আন্তঃধর্মীয় সংলাপে অংশগ্রহণ, ইসলামফোবিয়ার জবাব দেওয়া এবং প্রকৃত ইসলামী মূল্যবোধ তুলে ধরা ক্রমেই বাড়ছে।
ইসলামের পুনর্জাগরণ এখন আর কেবল আবেগনির্ভর নয়—এটি জ্ঞান, আত্মপরিচয়, দাওয়াহ ও কর্মমুখী চিন্তার ওপর ভিত্তি করে এগোচ্ছে। পশ্চিমা সভ্যতা যেমন মুসলিমদের চ্যালেঞ্জ করেছে, তেমনি একটি নতুন জাগরণ, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সুসংহত প্রয়াসের পথও খুলে দিয়েছে।
ইসলামের চিরন্তন বার্তা—আল্লাহর একত্ব, মানবতার কল্যাণ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা—আজও পৃথিবীর জন্য প্রাসঙ্গিক। প্রয়োজন শুধু সাহসিকতা, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
আজ সময় এসেছে—মুসলিম উম্মাহ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করুক, দ্বীন ও দুনিয়ার ভারসাম্য রক্ষায় জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলুক এবং ঐক্যের ভিত্তিতে এক নবজাগরণের সূচনা করুক।
ইসলামই একমাত্র পথ—আলোকিত, ন্যায়ভিত্তিক ও মুক্তিকামী মানবতার জন্য।
ছামিয়া