
ছবি: সংগৃহীত
পরশ পাথরের গল্প নিশ্চয়ই শুনেছেন—যে পাথরের সঙ্গে নাকি লোহা লাগলেই সোনা হয়ে যায়! কিন্তু মজার ব্যাপার জানেন কী? বর্তমানে এই পরশ পাথর না থাকলেও প্রকৃতিতে এমন একটা জীব আছে, যা নিজেই একরকম “লিভিং পরশ পাথর”—মানে সে খায় বিষ, আর ত্যাগ করে খাঁটি ২৪ ক্যারেট সোনা!
কি, মাথায় হাত দিয়ে বসে গেলেন তো? অবাক হবেন না, কারণ এই কথা কোনো গল্প নয়—এ একেবারেই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বাস্তব। এই জীবটা রীতিমত গবেষণাগারে জন্ম দেওয়া এক মাইক্রো দৈত্য।
সোনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তো হাজার হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন যুগে অ্যালকেমিস্টরা পরশ পাথরের সন্ধানে জীবন উৎসর্গ করতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, যে কোনও ধাতুকেই সোনায় রূপান্তর করা সম্ভব—শুধু চাই সেই জাদুকরী উপাদান। এমনকি আইজ্যাক নিউটন আর অ্যারিস্টোটল পর্যন্ত এই বিশ্বাসে গবেষণা চালিয়েছিলেন।
বিশ্বযুদ্ধের পর একবার জার্মানি বিশাল ঋণের চাপে পড়ে গেলে, নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ফ্রিটজ হেবার সাগরের পানি থেকে সোনা নিষ্কাশনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন—সামুদ্রিক খনিজ প্রক্রিয়াজাত করে সোনা তৈরি সম্ভব। কিন্তু সেই পরীক্ষাও ব্যর্থ হয়।
ঠিক তখনই আসে এক চমকপ্রদ তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, Cuparia vidus metallidurans নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত তরল খেয়ে বর্য হিসেবে খাঁটি সোনা তৈরি করতে পারে!
এই ব্যাকটেরিয়াকে যখন গোল্ড ক্লোরাইড নামক এক বিষাক্ত তরলের মধ্যে রাখা হয়, তখন তারা সেই বিষ খেয়ে ফেলে—আর শরীর থেকে যেটা বের হয়, সেটাই ২৪ ক্যারেট সোনা!
গবেষক ক্যাসেম কাশিফি ও অ্যাডাম ব্রাউন এই প্রক্রিয়াকে নাম দিয়েছেন: "Microbial Alchemy", অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াল রূপান্তরবিদ্যা।
শুধু তাই নয়—২০১৩ সালের ন্যাচারাল বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় আরও একটি ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেটিও আয়নকে সোনায় রূপান্তর করতে সক্ষম।
তবে ব্যাকটেরিয়া নির্ভর এই সোনা উৎপাদন পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে এখনো তা পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ।
তবু দর্শক, যখন পরশ পাথর কেবল মিথ হয়ে আছে, তখন এই “পরশ ব্যাকটেরিয়া” কিন্তু একেবারে বাস্তব!
শেখ ফরিদ