
ছবি: সংগৃহীত
একটি মানুষ যখন পণ্যে পরিণত হয়, তখন মানবতা বিপন্ন হয়। এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা বিশ্বের কোটি মানুষের জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে। আর সেই বাস্তবতাকে সামনে আনতেই প্রতি বছর ৩০ জুলাই পালিত হয় আন্তর্জাতিক মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস। জাতিসংঘ ২০১৩ সাল থেকে এ দিবস পালনের সূচনা করে।
বৈশ্বিক চিত্র: পাচারের ছায়া বিশ্বের উপর
জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদক বিষয়ক সংস্থার (UNODC) মতে, মানবপাচার আজ বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক অপরাধগুলোর একটি। এর শিকার প্রতি ১০ জনে ৭ জনই নারী ও শিশু।
মানবপাচার শুধু যৌন শোষণ নয়—শ্রম শোষণ, অঙ্গ পাচার, বাল্যবিবাহ, বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গোপনে বিক্রি এবং সাইবার যৌন অপরাধের মতো ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশ মানবপাচারের জন্য একটি উৎস ও গমন পথ উভয়ই। উপকূলীয় অঞ্চল, চরাঞ্চল, সীমান্তবর্তী জেলা এবং শহরের বস্তিবাসী—সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
লক্ষ্যবস্তু: দরিদ্র, অশিক্ষিত, কিশোরী, গৃহবধূ, বেকার যুবক
কৌশল: বিদেশি চাকরির লোভ, বিয়ের প্রস্তাব, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, ফাঁদে ফেলা
রুট: বাংলাদেশ → ভারত → মধ্যপ্রাচ্য/থাইল্যান্ড/মালয়েশিয়া/লিবিয়া → ইউরোপ
অনেক ক্ষেত্রে পাচারকারীরা পরিচিত আত্মীয় বা বন্ধুর মুখোশে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
আইন আছে, প্রয়োগ দুর্বল
বাংলাদেশে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ কার্যকর রয়েছে। রয়েছে জাতীয় কর্মপরিকল্পনাও।
তবুও—
- অভিযোগের মামলা কম হয়
- পাচারকারীরা প্রভাব খাটিয়ে পার পায়
- শিকাররা সমাজে ফিরে পায় না সম্মান
- ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রচুর ঘাটতি
কী করতে হবে?
১. সচেতনতা— পরিবার, স্কুল, গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।
২. দক্ষতা উন্নয়ন— বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে পাচারের ঝুঁকি কমে।
৩. নিরাপদ অভিবাসন— সরকারি অনুমোদিত উপায়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য সহজ পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে।
৪. গণমাধ্যমের ভূমিকা— পাচারবিরোধী বার্তা প্রচার এবং শিকারদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরা জরুরি।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা— আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমন্বয় ছাড়া আন্তর্জাতিক পাচার রোধ সম্ভব নয়।
এবারের প্রতিপাদ্য
‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার’
এই প্রতিপাদ্য মানবপাচারকে সংঘবদ্ধ অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেছে, যা মোকাবেলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিরোধ।
মানবপাচার কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এটি একটি ঘৃণ্য ব্যবসা—যা প্রতিদিন আমাদের সমাজের কাউকে না কাউকে গ্রাস করছে। এই দুঃসহ বাস্তবতায় আমাদের অঙ্গীকার হোক—‘কোনো মানুষই যেন পণ্যে পরিণত না হয়, মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার যেন কেউ না হারায়।’
মানবতার শৃঙ্খল ভাঙার সময় এখনই।
রাকিব