
ছবি: সংগৃহীত
পেঁয়াজ রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য একটি উপাদান, যার কাঁদিয়ে দেওয়ার খ্যাতি আছে। রান্না শুরু হতেই যদি আপনার চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে, তবে বুঝে নিতে হবে পেঁয়াজ আবার প্রতিশোধ নিচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, নিরীহ দেখা এই সবজির এত রাগ কেন?
পেঁয়াজ কাটার সময়ই মূল বিপত্তি। এর কোষভিত্তিক গঠন ভাঙলে এক ধরনের সালফার-যুক্ত রাসায়নিক নির্গত হয়—যাকে বলে propanethiol S-oxide। এই যৌগ বাতাসে মিশে চোখে পৌঁছায়, এবং তখনই আমাদের চোখ বলে ওঠে, আহা, এইটা কী হলো চোখ পানি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়, যেন নিজের সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করে।
তবে এখানে একটা মজার দৃষ্টিভঙ্গি আছ এই নিরীহ সবজি কেন আমাদের কাঁদায়? উত্তর হয়তো বিজ্ঞান দিতে পারে, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এ যেন এক নীরব প্রতিশোধ। আমরা প্রতিদিন পেঁয়াজ কাটি, ভাজি করি, কুচি করি, পুড়িয়ে দেই এই নির্যাতনের জবাবে হয়তো পেঁয়াজ তার অদৃশ্য অস্ত্রটি ছুঁড়ে দেয় আমাদের চোখে।
পেঁয়াজের প্রতি আমাদের যে নির্ভরতা, তাতে তার এই ‘প্রতিরোধ’ বা ‘প্রতিশোধ’ আসলে এক ধরনের ব্যতিক্রমী আত্মরক্ষা। কত রকম খাবারে তার প্রয়োজন! তবু আমরা তার ব্যথা বুঝি না। সে তাই চোখে পানি এনে দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয় সে শুধু কাটাকাটির বস্তু নয়, তারও কিছু অনুভব আছে।
তাই বলাই যায়, পেঁয়াজের প্রতিশোধ কেবল রাসায়নিক নয় এ এক নিঃশব্দ প্রতিবাদ, এক টুকরো স্মৃতি যা চোখে জল এনে দেয়, রান্নাঘরে।
পেঁয়াজের চোখে পানি আনার এই খেলা আসলে একটা মজার বৈজ্ঞানিক ঘটনা, কিন্তু একইসঙ্গে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক নিখুঁত রসিকতাও। পেঁয়াজের প্রতিশোধ হয়তো আমাদের রান্না করা মনোভাবের প্রতি এক নিরব প্রতিবাদ।
পরামর্শ:
পেঁয়াজ কাটার আগে ফ্রিজে রেখে দেখুন। ঠান্ডা পেঁয়াজ কম কাঁদায়। তবে যতই বিজ্ঞান বলুক, মনে রাখতে হবে পেঁয়াজ, তুমি শুধু এক ফালি সবজি নও, তুমি আমাদের রান্নার রাজনীতির এক চোখজল-কাহিনী।
লেখক:
এলেন বিশ্বাস, উত্তরা, ঢাকা
আবির