ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পেট পরিষ্কার রাখতে চাইলে সকালে কি খাওয়া জরুরি?

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩০ জুলাই ২০২৫

পেট পরিষ্কার রাখতে চাইলে সকালে কি খাওয়া জরুরি?

ছ‌বি: প্রতীকী

পেট পরিষ্কার থাকা ভালো স্বাস্থ্যের অন্যতম চাবিকাঠি। যদি প্রতিদিন সকালবেলা পেট ভালোভাবে পরিষ্কার না হয়, তাহলে সারা দিন অস্বস্তি, গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, মাথাব্যথা বা খিটখিটে মেজাজের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সকালে এমন কিছু খাবার খাওয়া জরুরি যা হজমে সাহায্য করে এবং পেট সহজে পরিষ্কার হতে সাহায্য করে।

প্রথমেই বলা উচিত, ঘুম থেকে উঠেই অনেকেই চা-কফি পান করেন। কিন্তু খালি পেটে এসব পান করা একেবারেই ঠিক না। বরং এক গ্লাস গরম পানি খাওয়া উচিত। গরম পানি লিভারকে সক্রিয় করে এবং জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। চাইলে এতে লেবুর রস ও এক চিমটি মধু মিশিয়ে নেওয়া যায়। এটি পেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

এরপর সকালের খাবারে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর, তা হলো আঁশযুক্ত খাবার। যেমন: ওটস, দানাশস্য, গোটা গমের রুটি বা লাল চালের ভাত। এগুলো শরীরের ভেতর হজম প্রক্রিয়াকে গতি দেয় এবং মল সহজে নির্গত হতে সাহায্য করে।

ফলমূলও পেট পরিষ্কার রাখতে দারুণ উপকারী। বিশেষ করে পেঁপে, কলা, আপেল, নাশপাতি, তরমুজ—এই ফলগুলোতে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ হজমে সাহায্য করে এবং পেটের ভেতরের জট খোলার মতো কাজ করে। সকালে এক প্লেট ফল খেলে না খেয়ে থাকা দীর্ঘ সময়ের পর পরিপাকতন্ত্র সক্রিয় হয় এবং শরীর স্বস্তি বোধ করে।

এ ছাড়া দইও খুব উপকারী। এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজমে সাহায্য করে। অনেক সময় পেটে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার অভাব হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। দই নিয়মিত খেলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। সকালের নাশতায় এক বাটি দই রাখা যেতে পারে।

চিয়া সিডস বা তিসির বীজেও রয়েছে প্রচুর আঁশ। এক চামচ চিয়া সিডস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভব হয়। এতে করে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।

সবজি জাতীয় খাবারের মধ্যে শাকপাতা বিশেষভাবে উপকারী। সকালবেলা হয়তো অনেকে তরকারি খেতে চান না, কিন্তু যদি নাস্তার সঙ্গে সামান্য পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া বা ঢেঁড়সের মতো হালকা সেদ্ধ সবজি রাখা যায়, তাহলে তা হজমে সহায়তা করে।

পানি পান করাও একান্ত জরুরি। অনেকেই সকালে খুব কম পানি পান করেন, যা পেট পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে নাশতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুললে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

ডিম, মুরগির মাংস কিংবা পনির—এসব প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হজমে সাহায্য করে বটে, তবে যাদের পেট পরিষ্কার হতে সমস্যা হয়, তাদের জন্য ভারী প্রোটিন সকালে না খাওয়াই ভালো। সকালে হালকা, সহজপাচ্য ও আঁশযুক্ত খাবারই সবচেয়ে বেশি উপকারী।

চিনিযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার সকালে একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন: পুরি, জিলাপি, সমুচা, সিঙ্গারা ইত্যাদি খাবার শুধু পেট ভারি করে না, বরং হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং পেট পরিষ্কার হতে বাধা দেয়।

তাই যারা প্রতিদিন সকালে ঠিকভাবে পেট পরিষ্কার রাখতে চান, তাদের উচিত গরম পানি দিয়ে দিন শুরু করা, সঙ্গে আঁশযুক্ত সহজপাচ্য খাবার, পর্যাপ্ত ফলমূল, দই, পানি ও সামান্য সবজি খাওয়া।

এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে গড়ে তুললে শুধু পেট পরিষ্কারই থাকবে না, বরং শরীরের ভেতরের পরিপাকতন্ত্রও আরও বেশি সক্রিয় ও সুস্থ থাকবে। প্রতিদিন সকালে সময় নিয়ে খাবার খাওয়া, সঠিক খাদ্য নির্বাচন ও পর্যাপ্ত পানি পান— এই সহজ তিনটি নিয়মই পেট ভালো রাখার চাবিকাঠি।

এম.কে.

×