
ছবি: সংগৃহীত
পিনাট বাটার, যা শুকনো ভাজা চিনাবাদাম পিষে তৈরি করা হয়, তার ক্রিমি গঠন ও সমৃদ্ধ স্বাদের জন্য বেশ জনপ্রিয়। টোস্টে, স্মুদি-তে বা সরাসরি চামচে—যেভাবেই খান না কেন, এটি সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিতেও ভরপুর। এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান—যা একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে প্রতিদিন পিনাট বাটার খেলে শরীরে কী হয়, সেটা কি আপনি ভেবে দেখেছেন? এটি যেমন কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়, তেমনি অতিরিক্ত খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে।
নিয়মিত পিনাট বাটার খাওয়ার কিছু উপকারিতা
প্রোটিনসমৃদ্ধ ও পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে
২ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা পেশি গঠনে সহায়ক এবং খাবারের মধ্যবর্তী সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
হার্টের জন্য ভালো চর্বি রয়েছে
এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট (বিশেষত ওলেইক অ্যাসিড) শরীরে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সহায়ক। তাছাড়া এতে রয়েছে আর্জিনিন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর
পিনাট বাটার শুধুমাত্র প্রোটিন ও ফ্যাট নয়, এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই, ফলেট ও ফাইবার। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন রিসভারেট্রল, কুমারিক অ্যাসিড ও পলিফেনলস শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চিনাবাদাম বা পিনাট বাটার খেলে গ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া উন্নত হয়, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। এটি হৃদরোগ ও বিপাকীয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
প্রতিদিন খেলে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে
অতিরিক্ত ক্যালোরি—মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ
২ চামচ পিনাট বাটারে প্রায় ১৯০ ক্যালোরি থাকে। অতিরিক্ত খেলে সহজেই ক্যালোরি অতিরিক্ত হয়ে যেতে পারে, ফলে ওজন বৃদ্ধি বা ডায়েট ভারসাম্যহীন হতে পারে।
অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড উপাদান
বাজারে পাওয়া অনেক ব্র্যান্ডে চিনি, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল ও লবণ বেশি থাকে, যা এর প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে। তাই শুধুমাত্র চিনাবাদাম ও সামান্য লবণ দিয়ে তৈরি প্রাকৃতিক পিনাট বাটার বেছে নেওয়াই ভালো।
অ্যালার্জি ও টক্সিনের সম্ভাবনা
চিনাবাদামে অ্যালার্জি অনেকের জন্য বিপজ্জনক—এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাছাড়া এতে থাকা আফ্লাটক্সিন নামক ছাঁচ-উৎপন্ন বিষ জাতীয় উপাদান দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যদিও এটি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় থাকে।
অতিরিক্ত খেলে হজম ও লিভারে সমস্যা
প্রতিদিন খুব বেশি পরিমাণে পিনাট বাটার খেলে হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত অক্সালেট গ্রহণ, লিভার চাপ বা গলব্লাডার সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে—যদিও এসব মূলত ব্যক্তিভেদে ঘটে।
ওমেগা‑৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের আধিক্য
পিনাট বাটারে ওমেগা‑৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত হলে ওমেগা‑৩ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে প্রাকৃতিক পিনাট বাটার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া এবং প্রসেসড ধরনের ব্যবহার এড়িয়ে চলা জরুরি। ব্যক্তিগত পুষ্টি চাহিদা ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় রেখে পিনাট বাটার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন।
শিহাব