
ছবি: সংগৃহীত
ধূমপানের বদঅভ্যাস ছাড়াই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। আধুনিক গবেষণা বলছে, ফুসফুসের ক্যানসারের মূল কারণ ধূমপান হলেও, অধূমপায়ীদের মধ্যেও এই রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফুসফুসের ক্যানসারের মোট রোগীর ১০ থেকে ৩০ শতাংশই কখনও ধূমপান করেননি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশগত ও জেনেটিক নানা কারণে অধূমপায়ীদের মধ্যেও ফুসফুসের ক্যানসার দেখা দিচ্ছে। নিচে এমন ৫টি কারণ তুলে ধরা হলো—
১. রেডন গ্যাসের সংস্পর্শ
রেডন হলো একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন প্রাকৃতিক গ্যাস, যা মাটি ও শিলার ভেতরে ইউরেনিয়ামের ক্ষয়প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। এই গ্যাস মেঝে বা দেয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। যেহেতু এর কোনো গন্ধ বা রং নেই, তাই বাসিন্দারা রেডনের উপস্থিতি টেরই পান না।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার মানুষ রেডন সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যান— যাঁদের বেশিরভাগই ধূমপান করতেন না। দীর্ঘমেয়াদি রেডন গ্যাস নিঃশ্বাসে গ্রহণ করলে ফুসফুসের কোষে ক্ষতি হয় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
বাসায় রেডন টেস্টিং কিট ব্যবহার করে গ্যাসের উপস্থিতি চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
২. পরোক্ষ ধূমপানের শিকার
পরিবারের কোনো সদস্য বা অফিসের সহকর্মী ধূমপান করলে, তার ধোঁয়ার সংস্পর্শে বারবার আসা ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ধূমপান না করেও পরোক্ষভাবে ধোঁয়া গ্রহণ করলে ফুসফুসের কোষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বহু অধূমপায়ীর ফুসফুসে ক্যানসার হয়েছে।
ঘর বা অফিসকে ধূমপানমুক্ত রাখা এবং ধূমপায়ী সঙ্গীর কাছ থেকেও দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।
৩. বায়ু দূষণ
যানবাহন, কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো উৎস থেকে নির্গত সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও বিষাক্ত গ্যাস দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্ষতি করে। শহরাঞ্চলে বা দূষিত এলাকায় বসবাসকারী অনেক অধূমপায়ীই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গ্রামে কিংবা শহরের কিছু ঘরে এখনো কাঠ, কয়লা বা গোবর জ্বালিয়ে রান্না করা হয়—যা বায়ুদূষণের বড় উৎস। এতে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
রান্নার জন্য পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার এবং ঘরের যথাযথ বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পেশাগত ও পরিবেশগত কারসিনোজেন
কোনো কোনো পেশায় কাজ করতে গিয়ে মানুষ অ্যাসবেস্টস, ডায়েসেল ধোঁয়া, বেনজিন, ভারী ধাতুর মতো পদার্থের সংস্পর্শে আসে, যা ফুসফুসের কোষে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
মাইন, নির্মাণশিল্প, কারখানা ইত্যাদিতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
ঝুঁকিপূর্ণ পেশার কর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
৫. জেনেটিক মিউটেশন ও পারিবারিক ইতিহাস
পরিবেশগত কারণ ছাড়াও ফুসফুসের ক্যানসার অনেক সময় জিনগত কারণে হয়। বিশেষ করে EGFR জিনের মিউটেশন অনেক অধূমপায়ীর দেহে ক্যানসার তৈরি করে।
এই ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন নারীদের এবং এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বর্তমানে জেনেটিক মিউটেশনের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসাও নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে, যা রোগীর জীবনরক্ষা ও সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।
সাবধান হোন, সচেতন হোন
- ঘরবাড়িতে রেডন পরীক্ষা করুন।
- ধূমপায়ী সঙ্গী বা সহকর্মীর ধোঁয়া থেকে নিজেকে বাঁচান।
- দূষণযুক্ত এলাকায় প্রয়োজন ছাড়া বেশি সময় বাইরে কাটাবেন না, মাস্ক ব্যবহার করুন।
- রান্নার সময় পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার করুন এবং রান্নাঘরে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন।
- উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পেশার মানুষদের সুরক্ষা গিয়ার ব্যবহার ও নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করা দরকার।
- কারও পরিবারে ফুসফুসের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে সময়মতো স্ক্রিনিং করান।
স্বাস্থ্যই সম্পদ— তাই ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে এখনই সচেতন হোন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব