
ছবি: প্রতীকী
৩০ জুলাই বুধবার রাশিয়ার কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনেছে ৮.৮ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর ফলে সৃষ্টি হয় সুনামি, যার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে জারি করা হয় সুনামি সতর্কতা। এই ঘটনাকে ঘিরে বাংলাদেশে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে—সুনামি কেন হয়? আমাদের দেশেও কি ঘটতে পারে এমন বিপর্যয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুনামির প্রধান কারণ হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে সংঘটিত ভূমিকম্প। পৃথিবীর বাইরের আবরণ টেকটোনিক প্লেট দিয়ে তৈরি, যেগুলো অনেকটা পাজলের টুকরোর মতো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। এরা ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে, বছরে গড়ে কয়েক সেন্টিমিটার। কোনো দুটি প্লেট পরস্পরের সঙ্গে আটকে গেলে সেখানে চাপ সৃষ্টি হয়, আর এক সময় সেই চাপ হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূমিকম্প ঘটে।
বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিকভাবে দুটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর একটি হলো ভারতীয় প্লেট ও অন্যটি বার্মা মাইক্রোপ্লেট। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী এলাকায় থাকা বার্মিজ প্লেট যদি বড় ধরনের কম্পনে নড়ে ওঠে, তাহলে বঙ্গোপসাগরেও সুনামির সৃষ্টি হতে পারে।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬২ সালের ২ এপ্রিল আরাকান উপকূলে ৮.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে তৈরি হয় একটি বড় সুনামি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যায় এবং প্রায় ৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু একটি বড় ভূমিকম্পের পর টেকটোনিক প্লেটে আবার শক্তি সঞ্চয় হতে ৫০০ থেকে ৯০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে, সেহেতু এমন বিপর্যয় শিগগিরই না ঘটার সম্ভাবনা বেশি। তবুও তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ফানেল-আকৃতির (trumpet-shaped) দেশ হওয়ায়, আন্দামান সাগর বা ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামি ঢেউ সরাসরি আমাদের উপকূলে ধেয়ে আসতে পারে। যদিও তা ইন্দোনেশিয়ার মতো মারাত্মক নাও হতে পারে, তবে উপকূলীয় এলাকায় তীব্র ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সুনামি হলে খোলা সমুদ্রে থাকা জাহাজগুলো তা টের পায় না, কারণ ঢেউগুলো তখন অনেক প্রশস্ত ও কম উচ্চতার হয়। তবে উপকূলের কাছে এসে সেগুলোর গতি কমে যায় এবং উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়, যা ১০০ ফুট পর্যন্তও হতে পারে।
১০-২০ ফুট উচ্চতার সুনামিও যদি কোনো উপকূলে আঘাত হানে, তাহলে তা মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে।
নুসরাত