
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনায় তথ্য চাওয়ায় প্রথম আলোসহ দুই সাংবাদিককে গালিগালাজ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আশরাফুল ইসলাম। আজ বুধবার বেলা ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানার সামনে গোলঘরে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছনার শিকার এই দুই সাংবাদিক হলেন রংপুরে কর্মরত প্রথম আলো নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান ও কালবেলার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি।
রেজওয়ান রনি বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনাটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের সীমানা লাগোয়া। হামলার ঘটনার অনুসন্ধানে নেমে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলার দিন গত রোববার সকাল থেকে কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার দূরে বাংলাবাজারে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে কিশোরগঞ্জের পাড়েরহাট, হাজিরহাট, মাগুরা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে এসে জড়ো হয়।
কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, ওইদিন কিশোরগঞ্জ থানা থেকে ঘটনাস্থলে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিল। মিছিলটি হিন্দু পাড়ার দিকে এগোলে তাঁরা বাধা দেননি। বরং পেছনে ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ বুধবার পৌনে তিনটার দিকে কিশোরগঞ্জ থানায় যান প্রথম আলোর রংপুরে কর্মরত প্রতিবেদক জহির রায়হান ও কালবেলার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি। থানার সামনের গোলঘরে বসে ওসির সঙ্গে দুই সাংবাদিকের এরকম কথোপকথনের পর ওসি উত্তেজিত হয়ে যান। তিনি দুই সাংবাদিককে গালিগালাজ করেন। ওসি বলেন, উস্কানি দিতে আসছে ওঁরা। উস্কানি দিচ্ছেন আপনারা। মিয়া সব খবর আছে আপনাদের উস্কানি দেওয়ার। আপনাদের যোগ্যতা থাকলে ভালো জায়গায় কিছু করতেন। এভাবে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতেন না।
এক পর্যায়ে রেজওয়ান রনিকে উদ্দেশ্য করে ওসি বলেন, চোখ দিয়ে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? এই এদের ধরেন তো। তখন উপস্থিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন তাঁকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে ওসি তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, “এই পুলিশ ডাকেন, ওদের ধরেন। প্ল্যান করতেছে দুজনে। প্রমাণ আছে আমার কাছে।”
ওসি আরও উত্তেজিত হলে এসআই মহসিন তাকে নিবৃত করে দুই সাংবাদিককে থানা থেকে সরিয়ে নেন। তখনও ওসি দুই সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করতে থাকেন।
সারাবাংলা ডট নেটের নীলফামারী প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম আপেল জানান, কিশোরগঞ্জ থানার ওসির কাছে ইতিপূর্বে আমরা কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। মাসখানেক পূর্বে স্থানীয় এক সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছিলেন। এরপর ওই সাংবাদিক মামলা করার পরেও থানা পুলিশের উদাসীনতার কারণে আবারো হামলার শিকার হন। জনগণকে সেবার পরিবর্তে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি হয়রানি করাচ্ছেন। অতিসত্বর এই ওসির অপসারণ না হলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিষয়টি জানতে চাইলে নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন ইসলাম শেখকে ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আপনাদের সাংবাদিকদের বোঝা উচিত আমি আধুনিক পুলিশ। আপনাদের সাংবাদিকদের ভয় করে চলবো এরকম কিন্তু আমি না। আপনি এসপি, ডিআইজি ও আইজির কাছে কমপ্লেন (অভিযোগ) করবেন, আপনার কমপ্লেনে যদি আমি চাকরিতে না থাকি, তাহলে এই চাকরিও আমি করব না। দুষ্কৃতিকারীর আমার কাছে স্থান নেই, সাংবাদিক হোক, আর পুলিশ অফিসার হোক আর রাজনীতিবিদ হোক। যদি ফাজলামো করেন, পিটিয়ে সোজা করে দেবো একেবারে।”
এ বিষয়ে নীলফামারী পুলিশ সুপার এ এফ এম তারিক হোসেন খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেলা পুলিশের বক্তব্য জানতে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
দুই পেশাদার সাংবাদিকের উপর ওসির এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন—আরপিইউজে'র সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণ কাম্য নয়। দুই সাংবাদিককে অপমান ও গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া ওসির আচরণ ফ্যাসিস্ট আমলের সঙ্গে মিলে যায়। অভিযুক্ত ওসিকে প্রত্যাহার করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা না করলে সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি
আফরোজা