
ছবি: সংগৃহীত।
জুলাই আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং মরণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এসেছিল সরাসরি রাজনৈতিক নির্দেশনায়—আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমনটাই দাবি করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি বলেন, "তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
জুলাই আন্দোলন ও আগের নির্বাচন ঘিরে গুম, খুন, ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই জবানবন্দিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন মামুন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ জুলাই থেকে আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতো। এসব বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন সচিব, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুনুর রশিদ, র্যাবের মহাপরিচালক, এনটিএমসির প্রধান জিয়াউল আহসান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকসহ (ডিজি) গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
সাবেক আইজিপির জবানবন্দিতে উঠে আসে, আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার ও মানসিকভাবে ভেঙে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বাধ্য করার পরিকল্পনাও ওইসব বৈঠকেই নেওয়া হয়। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হারুনকে 'জিন' নামে ডাকতেন, কারণ তিনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ছিলেন অত্যন্ত কার্যকর।
হেলিকপ্টার মোতায়েন ও গুলি চালানোর পরিকল্পনার বিষয়ে মামুন বলেন, “র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুনুর রশিদের পরিকল্পনায় আন্দোলন প্রবণ এলাকায় হেলিকপ্টার মোতায়েন এবং ব্লক রেইড চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
মরণাস্ত্র ব্যবহারে সবচেয়ে আগ্রহী ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের—জবানবন্দিতে এমনটিও বলেন মামুন।
সরকার পতনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট, বিকালে পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে গিয়ে সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জবানবন্দির শেষাংশে তিনি বলেন, “গুলিতে হতাহতদের ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি অনুতপ্ত এবং দুঃখিত।” তবে নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততা স্বীকার না করে তিনি শুধুমাত্র ‘বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন’ বলেই উল্লেখ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি মামুনকে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেছে। তিনি শর্ত দিয়েছেন, “পূর্ণ সত্য প্রকাশে” সহযোগিতা করবেন। ভবিষ্যতে এই জবানবন্দিতে তিনি অটল থাকেন কিনা, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
নুসরাত