ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ইলন মাস্কের হাইপারসনিক ফাইটার, বিমান প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব

প্রকাশিত: ০১:৪০, ৩১ জুলাই ২০২৫

ইলন মাস্কের হাইপারসনিক ফাইটার, বিমান প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

ইলন মাস্কের দূরদর্শী নেতৃত্বে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত সংস্থা SpaceX এবং টেসলা অ্যাডভান্সড এভিয়েশন যৌথভাবে সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম হাইপারসনিক ফাইটার জেট উড্ডয়ন করে বিমান প্রযুক্তি জগতে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই যুগান্তকারী যুদ্ধবিমানটি শব্দের গতির ৭ গুণ, অর্থাৎ প্রায় ৮,৬০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উড়তে সক্ষম, যা বর্তমানে প্রচলিত যেকোনো ফাইটার জেটের সর্বোচ্চ গতির (যেমন F-35-এর ম্যাক ১.৬) চেয়ে তিন গুণেরও বেশি দ্রুত। এর মাধ্যমে এটি কেবল প্রচলিত বিমানের গতিসীমাকেই ভেঙে দেয়নি, বরং বিমানযুদ্ধ, বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা এবং পরিবহন খাতের ভবিষ্যৎকেই নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

এই হাইপারসনিক ফাইটার জেটে ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক র্যামজেট-স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন, যা প্রচলিত জেট ইঞ্জিনের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অক্সিজেন-বিহীন প্রপালশন সিস্টেমে কাজ করে এবং বায়ুমণ্ডলের বাইরেও তার কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারে। এটিতে যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিলথ টেকনোলজি, যেখানে রাডার-শোষক পদার্থ এবং অ্যারোডাইনামিক ডিজাইনের কারণে বিমানটি প্রায় অদৃশ্যমান থাকে, যা শত্রুর রাডার ও ইনফ্রারেড সিস্টেমে এটিকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। এছাড়া, টেসলার স্বায়ত্তশাসিত ফুল সেলফ-ড্রাইভিং AI দ্বারা চালিত ককপিট পাইলটের চেয়ে দশ গুণ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অসামান্য কৌশলগত সুবিধা প্রদান করবে।

এই প্রযুক্তির প্রয়োগ বিমানযুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। এর অবিশ্বাস্য গতির কারণে এটি শত্রুর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনো সুযোগই দেবে না এবং এটি হাইপারসনিক মিসাইল বহনেও সক্ষম। সাবঅরবিটাল ফ্লাইট ক্ষমতার কারণে এটি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ৯০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পারে, যা বৈশ্বিক প্রতিরক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জুন ২০২৫-এ টেক্সাসের বোকা চিকা স্পেসপোর্ট থেকে এই বিমানের প্রথম সফল টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন হয়, যা পূর্বে নাসার X-43 (ম্যাক ৯.৬) এর গতি রেকর্ডকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। মার্কিন বিমানবাহিনী ২০২৬ সালের মধ্যেই এটিকে অপারেশনাল করতে চায়।

এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পেন্টাগন এটিকে "৬ষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান-এর সূচনা" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা সামরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে এক বিশাল উল্লম্ফন নির্দেশ করে। রাশিয়া এবং চীনও তাদের নিজস্ব হাইপারসনিক প্রোগ্রাম (যেমন রাশিয়ার আভানগার্ড, চীনের DF-ZF) ত্বরান্বিত করেছে, যা এই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমান নির্মাণকারী সংস্থাগুলোও হাইপারসনিক টেকনোলজি নিয়ে তাদের গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ বাড়িয়েছে। এলন মাস্কের মতে, এই প্রযুক্তি কেবল একটি যুদ্ধবিমান নয়, এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধ, ভ্রমণ ও প্রযুক্তির নতুন সংজ্ঞা। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এটি হাইপারসনিক প্যাসেঞ্জার জেট (যা নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি মাত্র ২ ঘণ্টায় পৌঁছাবে) এবং মহাকাশ পর্যটনের পথ উন্মুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা মানবজাতির জন্য এক নতুন হাইপারসনিক যুগে প্রবেশকে চিহ্নিত করছে।

সাব্বির

×