
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে শায়ান রহমান ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলি রুবাইয়াতুল ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার একদিন পরই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। বৃহস্পতিবার লেনদেন ১,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং সূচক বেড়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ ছিল। দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে অর্থ লগ্নি করানো, বন্ড ইস্যুতে অনিয়ম এবং সর্বশেষ “আমার বোন” নামের একটি প্রকল্পে একটি ব্যাংকের নামে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরই প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বুধবার তাদের তিনজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে ‘একটি সাহসী বার্তা’ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটা প্রমাণ করে যে অপরাধ করে কেউ রেহাই পায় না। তবে তারা এটিও মনে করেন, যদি লোপাট হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা না করা হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা না হয়, তাহলে শুধুমাত্র অবাঞ্ছিত ঘোষণার কার্যকারিতা সীমিত থাকবে।
এক বিনিয়োগকারী বলেন, “আমি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম, কিন্তু সে তো কোনো শাস্তি পায়নি, টাকা ফেরতও দেয়নি। তাহলে অবাঞ্ছিত ঘোষণার মানে কী?” আরেকজন বলেন, “তিনি জিএমজি থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন, এখন তার সম্পত্তি কর ফাঁকি দিয়ে বৈধ করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা না করে, তাহলে এই সব সিদ্ধান্ত মূল্যহীন।”
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি ভালো কোম্পানিগুলোকে ছায়ার আড়ালে রেখে বাজে কোম্পানিগুলোর শেয়ারকে কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এতে পুঁজিবাজার ধ্বংসের পথে গেছে।
সাবেক তদন্ত রিপোর্টেও এই অভিযোগের প্রতিফলন ছিল। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের ঘটনায় সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তৎকালীন খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রথম দুই ঘণ্টাতেই ৬০০ কোটির বেশি লেনদেন হয়। দিনশেষে তা ১,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সিটি ব্যাংক, ব্যাক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ছিল লেনদেনে শীর্ষে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির এ ধরনের কঠোর অবস্থান সাময়িকভাবে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও স্থায়ী সমাধানের জন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। শুধু অবাঞ্ছিত ঘোষণা নয়, প্রয়োজন অর্থ ফেরত আনার এবং অপরাধ প্রমাণ হলে আদালতের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করার।
তারা আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মানে হঠাৎ মুনাফা নয়। এখানে কোম্পানির ব্র্যান্ড বা নাম দেখে নয়, বরং তথ্য ও ডেটা যাচাই করে বিনিয়োগ করতে হবে—এই শিক্ষা নতুন করে সামনে এসেছে।
ছামিয়া