ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অবদান শীর্ষক আলোচনায় তারেক রহমান

সংসদ নির্বাচন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১ আগস্ট ২০২৫

সংসদ নির্বাচন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 
বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ মিলনায়তনে মহিলা দল আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অবদান শীর্ষক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রান্তিক পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। 
তারেক রহমান বলেন, এই দেশে যাতে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে বিশেষ করে নারী সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। সবার জন্য নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আসা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন হওয়া দরকার, তেমন দেশ গড়তে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীরা ভূমিকা রেখেছেন। নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রে নারীরা অনেকাংশ  ক্ষেত্রে পিছিয়ে। তাদের অর্থনৈতিক সাবলম্বিতায় বিএনপির বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। নারীদের শিক্ষাদান এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা সম্ভব।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে সামনে তা কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, শহীদদের কাছে বাংলাদেশ সারাজীবন ঋণি। এবার সেই ঋণ শোধ করার পালা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীরাও ভূমিকা রেখেছেন। 
তারেক রহমান বলেন, দেশে যাতে আর কোনোভাবেই কোনোদিন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এ ব্যাপারে বিশেষ করে নারী সমাজকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রকামী জনসাধারণের উদ্দেশে বলছি- আসুন, নারী-পুরুষ-শিশু, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য শহীদদের কাক্সিক্ষত একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান অভিযাত্রায় অতীতের মতো আগামীদিনেও আমরা আমাদের মা-বোনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দৃঢ়ভাবে সমর্থন আশা করি। 
তারেক রহমান, বলেন, বাংলাদেশে পরিবার হিসেবে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়  পেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পরিবারের নারী প্রধানের নামে ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড আমরা ইস্যু করব। এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক অথবা প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা। আমরা আশা করছি এই ধরনের উদ্যোগে পরিবার এবং সমাজে একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে। অপরদিকে পরিবারগুলোর সামনে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগও তৈরি হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমার মাও এক সন্তানকে হারিয়েছেন। বহু স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছে, বোন তার ভাইকে হারিয়েছেন, অনেক মা বহুভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন। অনেক পরিবারের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। 
 দেশে নারীদের উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন,  বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক নারীদের রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে কখনোই আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করতে পারব না। সে কারণে নারী শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্ধেক সংখ্যক নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ধারণ করে বিএনপি সকল কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে। 
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বায়নের এই সময়ে নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।  বিশ্বের সব দেশে নারীদের জন্য শিক্ষা-চাকরি-ব্যবসাসহ সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। শুধু নারী- পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা-দীক্ষায় কমপক্ষে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন, অত্যন্ত জরুরি, যদি আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি নারীদের শিক্ষা দানে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে নারীর প্রতি বৈষম্য লোপের পাশাপাশি অর্থনৈতিক টানাপোড়েনকে  কেন্দ্র করে পারিবারিক সহিংসতাও রোধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। সে কারণেই বিএনপির স্লোগান ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’। এ কারণেই বিএনপির নীতি মানবিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত দক্ষ জনশক্তি তৈরির রাজনীতি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি।
আলোচনা সভা শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন শেষে বিএনপির দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খানম রিতার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এর পর সংগীত শিল্পী মৌসুমীর গান শেষে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। 
পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ ফারহান ফাইয়াজের ছোট বোন সায়মা ইসলাম ফারদিন, শহীদ সালাউদ্দিনের স্ত্রী তমা সালাউদ্দিন, ফেনী জেলার প্রথম শহীদ ইসতিয়াক আহমেদের মা ফাতেমা আক্তার শিউলি, ৬ বছরের শহীদ শিশু জাবিরের মা রোকেয়া বেগম, সোশাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ জনপ্রিয় টেবিল টক এর উপস্থাপিকা হাসিনা আক্তার, গুম পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা, গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহামিনা রুশদী লুনা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান প্রমুখ। 
অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিকটিম পরিবারগুলোকে মেডেল প্রদান করা হয়। উপস্থাপনায় ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান।

প্যানেল হু

×