ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

নাসার যুগান্তকারী আবিষ্কার: পৃথিবীর চেয়েও বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৩:১০, ৩১ জুলাই ২০২৫

নাসার যুগান্তকারী আবিষ্কার: পৃথিবীর চেয়েও বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দিতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সম্প্রতি সংস্থাটি এমন কিছু গ্রহের সন্ধান পেয়েছে, যেগুলো শুধু পৃথিবীর মতোই নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি বাসযোগ্য হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার এই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি গ্রহ, যেগুলোর পরিবেশ মানুষ বসবাসের জন্য অত্যন্ত অনুকূল।

সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জের কোপেল ৫৭১৫ ও ১

ছবি: সংগৃহীত

নাসার আবিষ্কৃত এমনই এক গ্রহ হলো Keppel 5715 o 1, যা সিগনাস (Cygnus) নামের নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। পৃথিবীর দ্বিগুণ আকারের এই পাথুরে গ্রহটিতে এমন পরিবেশ রয়েছে, যা মানব বসবাসের জন্য একেবারেই উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই গ্রহটি আমাদের থেকে প্রায় ৩,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, তবুও বিজ্ঞানীদের মতে, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ঠিকানা।

কাছাকাছি গ্রহ: প্রোক্সিমা সেন্টোরি বি

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর অনেক কাছের একটি গ্রহ হচ্ছে Proxima Centauri b। মাত্র ৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি ২০১৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। এটি প্রোক্সিমা সেন্টোরি নামের একটি লাল বামন তারা প্রদক্ষিণ করে। গ্রহটি তারার ‘বাসযোগ্য জোনে’ অবস্থান করায় এখানে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জীবনের অন্যতম মৌলিক শর্ত। তবে লাল বামন তারা অনেক সময় তীব্র সৌরঝড় সৃষ্টি করে, যা গ্রহের পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে।

বরফঘেরা পৃথিবীসদৃশ গ্রহ: কেপলার ১৮৬ এফ

ছবি: সংগৃহীত

Kepler 186f নামের গ্রহটি একটি পাঁচটি গ্রহবিশিষ্ট সৌরজগতের অংশ। এটি একটি লাল বামন তারা প্রদক্ষিণ করে, যার নাম Kepler 186। এই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ২,০০০ কিলোমিটার বড় এবং এর দিন-রাত, ঋতু ইত্যাদি পৃথিবীর মতোই। তবে এখানে একটি বছর হয় মাত্র ১৩০ দিনে। যদিও এখানকার গড় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির আশপাশে, তবুও এর পরিবেশ প্রাণ ধারণের পক্ষে উপযুক্ত বলে মনে করছেন গবেষকরা।

নিকটবর্তী প্রতিবেশী: ট্র্যাপিস্ট-১ ই

ছবি: সংগৃহীত

TRAPPIST-1e হচ্ছে আরেকটি চমকপ্রদ গ্রহ, যা পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৯ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি TRAPPIST-1 নামের একটি সূর্যের চেয়ে ছোট ও শীতল তারা প্রদক্ষিণ করে। এই গ্রহটিকে 'Earth-like' বা পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। তবে এই গ্রহের একটি পাশ চিরকাল দিনের আলোয় ও অন্য পাশ চিরকাল অন্ধকারে ঢাকা থাকে বলে ধারণা করা হয়, যা তাপমাত্রার ভারসাম্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

আরেক সম্ভাবনাময় বিশাল পৃথিবী: কেপলার ৪৫২বি

ছবি: সংগৃহীত

Kepler 452b পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৬০% বড় এবং এর এক বছরের দৈর্ঘ্য ৩৮৪ দিন। এটি এমন একটি তারা প্রদক্ষিণ করে, যার আকার ও তাপমাত্রা সূর্যের কাছাকাছি। তবে ১,৮০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটির গঠন ও বায়ুমণ্ডলের বিশ্লেষণ এখনও অসম্পূর্ণ। অনেক বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ‘গ্রীনহাউস ইফেক্ট’ প্রবলভাবে কাজ করতে পারে, যা জীবনধারণে অন্তরায় হতে পারে।

টিগার্ডেন বি: নিকটবর্তী সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে আবিষ্কৃত Teegarden b মাত্র ১২ আলোকবর্ষ দূরে। এটি একটি লাল বামন তারা প্রদক্ষিণ করে এবং এটি হ্যাবিটেবল জোনে অবস্থান করছে। পৃথিবীর আকারের কাছাকাছি এই গ্রহটিও পাথুরে এবং এখানে তরল পানির অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে স্পেকট্রোস্কোপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা হলে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে।

এলএইচএস ১১৪০বি: ঘন বায়ুমণ্ডলে ঢাকা রহস্যময় গ্রহ

ছবি: সংগৃহীত

২০১৭ সালে আবিষ্কৃত LHS 1140 b গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় ছয়গুণ ভারী এবং একটি লাল বামন তারা প্রদক্ষিণ করে। এই গ্রহে একটি ঘন বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা সৌর বিকিরণ থেকে সুরক্ষা ও তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে গ্রহটিতে তরল পানি ও জীবনধারণের পরিবেশ বিদ্যমান থাকতে পারে।

টাউ সেটি: পরিচিত তারার চারপাশে আরেকটি সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

Tau Ceti নামের একটি নক্ষত্র, যা সূর্যের খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের, তার চারপাশে আবর্তিত একটি গ্রহকে ২০১২ সালে আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। এই গ্রহটি ১.৭ গুণ বড় এবং পাথুরে বলে ধারণা করা হয়। তবে এটি হ্যাবিটেবল জোনের অভ্যন্তর প্রান্তে থাকায় এখানে ‘রানঅ্যাওয়ে গ্রীনহাউস ইফেক্ট’ দেখা দিতে পারে, যেমনটি শুক্রে ঘটেছিল।

রস ১২৮বি: জীবনের খোঁজে এগিয়ে যাওয়া

ছবি: সংগৃহীত

Ross 128b নামের গ্রহটি ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং এটি পৃথিবী থেকে মাত্র ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি Ross 128 নামের একটি লাল বামন তারা প্রদক্ষিণ করে। গ্রহটি তারার হ্যাবিটেবল জোনে অবস্থান করায় এখানে প্রাণের সম্ভাবনা অত্যন্ত জোরালো।

এই গ্রহগুলোর প্রতিটির মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে প্রাণধারণের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বর্তমান প্রযুক্তিতে এত দূর যাত্রা করা অসম্ভবপ্রায়, তবুও ভবিষ্যতে মানুষের জন্য বিকল্প আবাসস্থল খুঁজে পেতে এই অনুসন্ধানগুলোই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ। মহাবিশ্বে কোথাও কি পৃথিবীর বাইরেও প্রাণ রয়েছে? নাসার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার পথে একটি বড় ধাপ।

রাকিব

×