
ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক জীবনযাত্রায় রাত জাগা একটি সাধারণ অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। পড়াশোনা, কাজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা বিনোদনের কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী রাত জাগা বা অপর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
রাত জাগার ফলে শরীরের যেসব ক্ষতি হতে পারে:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে সর্দি-কাশি, ফ্লু-সহ বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
২. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা:
ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, সিদ্ধান্তহীনতা, বিরক্তি এবং উদ্বেগ বাড়ে। দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন) এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি:
রাত জাগা বা ঘুমের অভাব উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ঘুমের সময় রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কমে আসে। যখন আপনি পর্যাপ্ত ঘুমান না, তখন রক্তচাপ দীর্ঘক্ষণ উচ্চ থাকে, যা হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
৪. ডায়াবেটিস ও স্থূলতা:
ঘুমের অভাব শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, ঘুম কম হলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রক হরমোন (লেপটিন ও ঘ্রেলিন) প্রভাবিত হয়, যা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার কারণ হয়।
৫. হজমে সমস্যা:
অপর্যাপ্ত ঘুম হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এর ফলে পেটে ব্যথা, গ্যাস, বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)-এর লক্ষণগুলোও ঘুমের অভাবে খারাপ হতে পারে।
৬. ত্বকের ক্ষতি:
ঘুমের অভাব ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ত্বককে শুষ্ক ও নিস্তেজ করে তোলে। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা, চোখের নিচে কালি এবং অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি "বিউটি স্লিপ" না পাওয়ার ফল।
৭. শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পেশী পুনরুদ্ধার এবং শারীরিক শক্তি কমে যায়। ফলে শারীরিক কাজে দ্রুত ক্লান্তি আসে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পেশী ব্যথার প্রবণতা বাড়ে।
৮. দুর্ঘটনার ঝুঁকি:
ঘুমের অভাবে মনোযোগ এবং প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা কমে যায়, যা গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি পরিচালনার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতোই বিপজ্জনক হতে পারে।
কীভাবে রাত জাগা এড়াবেন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করবেন?
নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন, এমনকি ছুটির দিনেও।
ঘুমের পরিবেশ: ঘুমানোর ঘর অন্ধকার, ঠাণ্ডা এবং শান্ত রাখুন।
স্ক্রিন টাইম কমানো: ঘুমানোর অন্তত ১-২ ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভির স্ক্রিন দেখা বন্ধ করুন।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার: সন্ধ্যায় ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
নিয়মিত ব্যায়াম: দিনের বেলা নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে নয়।
ছোট ঘুম (Naps): দিনের বেলা যদি খুব ঘুম পায়, তবে ২০-৩০ মিনিটের একটি ছোট ঘুম নিতে পারেন, তবে তা যেন সন্ধ্যায় না হয়।
যদি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ঘুমের সমস্যা থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সাব্বির