ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নারী স্বাধীনতায় বাধা নয়

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ৩১ জুলাই ২০২৫

নারী স্বাধীনতায় বাধা নয়

বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের পোশাক নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত দিলে সেখানে নারীদের বিষয়ও প্রাসঙ্গিক আলোচনায় উঠে আসে। শুধু কি আলোচনা? প্রচণ্ড আলোড়নে প্রতিবাদ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ, বিমর্ষ হতেও সময় লাগেনি। আবহমান বাংলা সাংস্কৃতিক বৈভবে এক উর্বর পলিমাটির দেশ। বৈষয়িক সম্পদের পাশাপাশি মানসিক সুচিন্তিত বিকাশও ছিল অঞ্চলটির এক অভাবনীয়  শৌর্য। জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ধারায় তার আচরণ যেমন প্রাসঙ্গিক তেমনি পোশাক পরিচ্ছদেও থাকে এক নান্দনিক, সাবলীল এবং মার্জিত বাতাবরণ। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করে তাদের প্রতি দিনের জীবনাচরণের হরেক বৈশিষ্ট্য। পোশাক পরিচ্ছদ যে কোনো অঞ্চলের চারপাশের পরিবেশ, চাহিদা এবং রুচিশীলতার ওপর বরাবরই নির্ভরশীল। অষ্ট্রিক জাতিগোষ্ঠীর এই শাশ্বত বাঙালি তার চিরায়ত শৌর্যবীর্যে পোশাক পরিচ্ছদেও এক মার্জিত বাতাবরণের পরম নির্মাল্য। আবহমান বাংলার নারীর সবচেয়ে পছন্দনীয় পোশাক শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ। যাতে তারা শুধু স্বচ্ছন্দ বোধই নয় রুচিসম্মত বস্ত্র পরিধানে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতেও বঙ্গললনাদের জুড়ি নেই। সেখানে শুধু সাজ পোশাকই নয় বরং নান্দনিক অলঙ্কার আর প্রসাধনীতেও অঙ্গসজ্জার যে বহুমাত্রিক আবেদন তা এই অঞ্চলের পরিশীলিত বস্ত্র সজ্জায়ও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায় সালোয়ার কামিজ, ওড়না আর শাড়ি-ব্লাউজের দৃষ্টিনন্দন শোভা বর্ধনে রূপ লাবণ্যের যে ঝিলিক তেমন উপমা মেলাও ভার। ভদ্র, সংযত, পরিশীলিত আর নান্দনিক পোশাক পরিধান যুগ-যুগান্তরের বঙ্গ রমণীর আর এক নমনীয়, কমনীয় ভাবের অঙ্গসজ্জার পরম নিবেদন। হ্যাঁ, বোরকা যেমন সবাই পরে না- তেমনি হাত কাটা ব্লাউজ পরতেও সেভাবে দেখা যায় না। 
সেখানে যখন বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে নির্দেশনা আসে পোশাক নিয়ে নতুন ব্যবস্থাপনা। মানা কঠিন, কেউই মানতেও পারছে না।
নতুন নির্দেশনায় সেই চিরায়ত সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি, ব্লাউজ পরা নিয়ে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে সহনীয় হতো। কিন্তু নেতিবাচক কিছু সিদ্ধান্তহীনতায় সারাদেশে বিক্ষোভ, আলোচনা- সমালোচনায় তোলপাড় হয়। পরিস্থিতি বেসামাল বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে নারীদের প্রতি অসম্মানসূচক যা করার সবই কেমন যেন ঘটেই গেল। আগেই উল্লেখ করেছি সালোয়ার কামিজ আর শাড়ি-ব্লাউজই আবহমান বঙ্গরমণীর পছন্দসই পোশাকই শুধু নয় নিজেদের পরিশীলিত, মার্জিত বস্ত্র পরিধানেরও নিয়ামক শক্তি।
নতুন নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয় যেন আটসাট, কারুকার্য খচিত কোনো পোশাক পরিধান করা যাবে না। আলাদা হিসেবে স্কার্ফ পরার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। শুধু তাই নয়, অফিসের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। তেমন অবান্তর নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সারাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করে নিতেও সময় নেয়নি। তবে বিষয়টা নারীর পোশাক পরিচ্ছদে স্বাধীনতার ওপর বিরূপ হস্তক্ষেপ বিধায় সেখানে নারীরা অসম্মানিত বোধ করেছেন, ক্ষিপ্ত হয়েছেন। প্রতিবাদ করে নিজেদের স্বাধীন মতকে উপস্থাপন করেন। 

প্যানেল/মো.

×