
ছবি: সংগৃহীত
যেখানে ধারণা করা হয় আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো পুরনোদের চেয়ে উন্নততর, সেখানেই চমক দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম জেটগুলো। এই গতি-দানবগুলো শুধু প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দিচ্ছে না, বরং যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির গতিময় ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।
যদিও সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন ‘দ্রুততম জেট’-এর যুগ শেষের পথে, বিশ্বের বহু দেশের বিমানবাহিনীই এখন মনোযোগ দিচ্ছে ড্রোন বা UAV-এর দিকে—তবু এখনও কিছু যুদ্ধবিমান তাদের গতি ও ক্ষমতার জন্য ইতিহাসের সেরা জেট হিসেবে রয়ে গেছে।
সবচেয়ে দ্রুততম জেটগুলোর তালিকায় আমেরিকাই শীর্ষে
সুখোই SU-57
গতি: ১,৩২০ মাইল/ঘণ্টা
রাশিয়ার বহুল আলোচিত SU-57 স্টেলথ ফাইটার নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। স্টেলথ প্রযুক্তিতে দুর্বলতা এবং উন্নয়নজনিত জটিলতা থাকলেও গতি ও প্রযুক্তির দিক থেকে এটি উল্লেখযোগ্য।
লকহিড মার্টিন F-22 র্যাপ্টর
গতি: ১,৩৫৫ মাইল/ঘণ্টা
বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই ট্যাকটিক্যাল ফাইটার কেবল আকাশে শত্রু দমনেই নয়, গ্রাউন্ড অ্যাটাক ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারেও দক্ষ। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের MiG-29 ও SU-27-এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এটি তৈরি করে।
দাসো মিরাজ ২০০০ (ফ্রান্স)
গতি: ১,৪৫০ মাইল/ঘণ্টা
ফ্রান্সের নির্মিত এই ফাইটারজেট শক্তিশালী আফটারবার্নিং টার্বোফ্যান ইঞ্জিনে চালিত, যার ফলে এর উড্ডয়ন হার প্রতি সেকেন্ডে ২৮৫ মিটার এবং গতি প্রায় ১,৪৫০ মাইল/ঘণ্টা।
মিগ-২৯ ফুলক্রাম
গতি: ১,৫২০ মাইল/ঘণ্টা
রাশিয়ার তৈরি এই যুদ্ধবিমান এখনো সক্রিয়। অত্যাধুনিক মিগ-২৯ ডিজাইন করা হয়েছিল আমেরিকার F-15 ও F-16 যুদ্ধবিমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। গতি আর কৌশলে এটি আজও রাশিয়ার অন্যতম নির্ভরযোগ্য জেট।
গ্রুমান F-14 টমক্যাট (যুক্তরাষ্ট্র)
গতি: ১,৫৪০ মাইল/ঘণ্টা
নৌবাহিনীর ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ফাইটার, যদিও খরচ কমাতে এটি অবসর নেয় আগেভাগেই। আধুনিকীকরণ করলে এটি ২০৩০ পর্যন্ত চালানো যেত বলে ধারণা।
ইউরোফাইটার টাইফুন (ইউরোপ)
গতি: ১,৫৪০ মাইল/ঘণ্টা
বিএই সিস্টেমস, এয়ারবাস ও লিওনার্দোর যৌথ উদ্যোগে তৈরি। উন্নত কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ আর উচ্চ-অস্থির উইং ডিজাইনের কারণে এটি চমৎকারভাবে চতুর ও দ্রুত।
F-15 ঈগল (যুক্তরাষ্ট্র)
গতি: ১,৬৫০ মাইল/ঘণ্টা
F-15 এখনও পর্যন্ত আকাশযুদ্ধে একটিও পরাজয় বরণ করেনি—এটা অনেক কিছুই বলে দেয়। সর্বশেষ F-15E মডেলে ইলেকট্রনিক স্ক্যানড অ্যারে র্যাডারসহ বহু উন্নতি এসেছে। দুইটি Pratt & Whitney ইঞ্জিন থেকে আসে ৪৭,০০০ পাউন্ড থ্রাস্ট।
জেনারেল ডায়নামিক্স F-111 আরডভার্ক
গতি: ১,৬৫০ মাইল/ঘণ্টা
মাঝারি রেঞ্জের এই স্ট্রাইক ফাইটার কম রানওয়েতেও অবতরণে সক্ষম। রাতের আঁধারে নিচু উড়াল দিয়ে শত্রু শিকারেই এর কুখ্যাতি। ৪,০০০টির বেশি মিশনে মাত্র ৬টি হারানোর নজির যুদ্ধবিমানের ইতিহাসেই বিরল।
চেংদু J-10 (চীন)
গতি: ১,৬৮৭ মাইল/ঘণ্টা
চীনের এই ফাইটারজেট একদিকে MiG-31 ও F-15C-এর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকলেও, একক WS-10B ইঞ্জিনের কারণে এর থ্রাস্ট অত্যন্ত শক্তিশালী। ভারসাম্যপূর্ণ ডিজাইন এবং গতি—দুটোই মেলে একসাথে।
লকহিড YF-12 (যুক্তরাষ্ট্র)
গতি: ২,২৭৫ মাইল/ঘণ্টা
SR-71 ব্ল্যাকবার্ডের পূর্বসূরি এই YF-12 আসলে Mach 3 স্পিডের জেট। প্রোডাকশনে গেলে এটি MiG-25 Foxbat-এরও ওপরে থাকত গতি ও ক্ষমতায়।
দ্রুততার যুগ কি শেষ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে ড্রোন ও সর্বাধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু তখনও কিছু সুপারসনিক যুদ্ধবিমান থাকবে ইতিহাসের পাতায় গর্বের জায়গায়। যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম যুদ্ধবিমানগুলো নিঃসন্দেহে গতি ও আধিপত্যের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষে।
রাকিব