ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কালোজিরা: হাদিস ও বিজ্ঞান যার গুণে একমত

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা 

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৫

কালোজিরা: হাদিস ও বিজ্ঞান যার গুণে একমত

ছবিঃ সংগৃহীত

ক্ষুদ্র বীজে প্রকৃতির অসীম শক্তি রয়েছে কালোজিরায়। মানুষের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপাদানের গুরুত্ব চিরন্তন। হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসা এমনই একটি বিস্ময়কর ভেষজ উপাদান হলো কালোজিরা। আকারে ছোট হলেও এর গুণাগুণ অসাধারণ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করো, এতে সব রোগের উপশম আছে, মৃত্যু ব্যতীত।” এ হাদিস থেকেই বোঝা যায়, কালোজিরা শুধু প্রাকৃতিক ওষুধ নয়, বরং তা ইসলামী চিকিৎসাবিদ্যায়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa। এটি একটি বার্ষিক ঔষধি গাছের বীজ, যা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে চাষ হয়ে থাকে। বাংলায় একে কালোজিরা, ইংরেজিতে Black Seed বা Black Cumin বলা হয়। বীজগুলো দেখতে কালো, স্বাদে তিক্ত ও ঝাঁঝালো। অনেক সময় এটি রান্নায় মসলা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে সবচেয়ে বড় পরিচয়, এটি একটি প্রাকৃতিক ওষুধ।

কালোজিরার উপকারিতা:

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

কালোজিরা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ফলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

৩. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা:

এতে থাকা থাইমোকুইনোন নামক উপাদান কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাবনাময়:

কালোজিরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে।

৫. হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী:

কালোজিরার তেল ব্রঙ্কিয়াল টিউবকে শিথিল করে এবং শ্বাস নিতে সহায়তা করে।

৬. হজমে সহায়ক:

গ্যাস, পেট ফাঁপা, বদহজম ও পেটব্যথায় কালোজিরা চমৎকার কাজ করে।

৭. ত্বক ও চুলের যত্নে:

কালোজিরার তেল ব্রণ, চুল পড়া ও খুশকিতে উপকারী। এটি ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল রাখে।

৮. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায়:

প্রাকৃতিক উপায়ে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে ও হতাশা-উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

খাওয়ার পদ্ধতি:

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধা চা চামচ কালোজিরা গুড়ো করে মধু বা গরম পানির সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।

কালোজিরার তেল ১ চা চামচ দিনে ১-২ বার খাওয়া যায়।

রান্নায় বা সালাদে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

দুধে মিশিয়ে খাওয়া গেলে হজম ও অনিদ্রায় উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতা:

অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে পেট খারাপ, বমি কিংবা রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

গর্ভবতী নারী, শিশু বা যাদের জটিল রোগ রয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।

যেকোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আধুনিক ওষুধের ভিড়ে প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদানগুলো যেন ভুলে না যাই। কালোজিরা শুধু ইসলামিক দৃষ্টিকোণেই নয়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তার অবস্থান প্রমাণ করেছে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ম্যাজিক নয়—বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করলেই এর উপকার পুরোপুরি পাওয়া সম্ভব।

নোভা

আরো পড়ুন  

×